আগেও সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন, এবার সেই দাবির আরও ঝাঁঝ বাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্টতই জানালেন, সংস্কার ছাড়া একবিংশ শতকের বিশ্বে কার্যত অচল রাষ্ট্রসংঘ। তারই অঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্যপদ প্রদানের দাবি আরও জানালেন।
শনিবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ২২ মিনিটের ভাষণে মোদী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রসংঘের সংস্কারের প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করছে ভারতের মানুষ। আজ ভারতের মানুষ চিন্তিত যে আদৌও এই সংস্কার প্রক্রিয়া কখনও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে কিনা।’
দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য করার প্রক্রিয়া নিয়ে যে টালবাহানা চলছে, তাতেও কার্যত বিরক্তি প্রকাশ করেন মোদী। যে প্রক্রিয়ায় আলোচনা সংক্রান্ত কোনও নথিও দেখানো হয়নি। তা নিয়ে শনিবার সোজাসাপটা মোদী বলেন, ‘ভারতকে আর কতদিন রাষ্ট্রসংঘ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কাঠামোর বাইরে রাখা হবে?'
আর কী কী বলেছেন মোদী, দেখে নিন একনজরে :
১) যখন রাষ্ট্রসংঘ গঠিত হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিল। এখন একবিংশ শতকের প্রজন্মের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা আলাদা রকম। সেটির বৈশিষ্ট্য কি আজও প্রাসঙ্গিক আছে?
২) প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য বর্তমান বিশ্বে পরিবর্তন হওয়া । প্রতিক্রিয়ায় সংস্কার, ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং রাষ্ট্রসংঘের সংস্কারও এখন সময়ের চাহিদা। এটা সত্যি কথা যে ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের মনে রাষ্ট্রসংঘের প্রতি যে বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা আছে, তা অতুলনীয়।
৩) কতদিন আর রাষ্ট্রসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী দেশের বাইরে রাখা হবে? যে দেশ বিশ্বের সবথেকে বড় গণতান্ত্রিক দেশ, যে দেশে পৃথিবীর ১৮ শতাংশ মানুষ থাকেন।
৪) যখন আমরা শক্তিশালী ছিলাম, বিশ্বের কাউকে আমরা জ্বালাতন করিনি। যখন আমরা বাধ্য হয়েছিলাম, তখন কারোর উপর বোঝা হয়নি ভারত। করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের সময় কোথায় ছিল রাষ্ট্রসংঘ? কোথায় ছিল কার্যকরী পদক্ষেপ?
৫) করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ১৫০ টি দেশকে জরুরি ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
৬) বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের দেশগুলিকে আমি আশ্বাস দিতে চাই যে ভারতের টিকা উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষমতা পুরো মানবজাতিকে এই মহামারী থেকে বের করে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। ভারত ও প্রতিবেশি দেশে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের দিকে এগোচ্ছি। টিকার ডেলিভারির ক্ষেত্রে কোল্ড চেন এবং সংগ্রহের বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ভারত সবার সাহায্য করবে।
৭) গত কয়েক বছর ধরে সংস্কার-কাজ করা-পরিবর্তনের (রিফর্ম-পারফর্ম-ট্রান্সফর্ম) মন্ত্রের সঙ্গে কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ভারত।
৮) মহামারীর ফলে যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে, সেই সময় আমরা আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বের অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা ব্যাপক সহায়ক হবে। কোনও বৈষম্য ছাড়াই সব প্রকল্প যাতে সব মানুষের কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করছে ভারত।