ভোট মরশুমে বিজেপির নয়া অস্ত্র পরাধীন ভারতের আদিবাসী নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী বিরসা মুণ্ডাকে নিয়ে আমজনতার, বিশেষ করে আদিবাসী ভোটারদের আবেগ।
বিরসা মুণ্ডা যে আজও আদিবাসীদের গর্ব, সেকথা ভালোই বুঝতে পারছে বিজেপি তথা এনডিএ শিবির। আর তাই, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর গলাতেও শোনা যাচ্ছে বিরসা মুণ্ডার নাম ও প্রশংসা।
মোদীর বার্তা, পরাধীন ভারতে যে বীর যোদ্ধারা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে সামিল হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিরসা মুণ্ডা অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও, তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মান বা স্বীকৃতি পাননি। আর তার জন্য ফের একবার কংগ্রেসকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।
শুক্রবার, বিহারের জামুইয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'আজ আমরা জনজাতীয় গৌরব দিবস পালন করছি। আমাদের বুঝতে হবে কেন এটা পালন করা জরুরি। অতীতে যে অবিচার করা হয়েছে, তা সংশোধন করার এ হল এক সৎ উপায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আদিবাসী সমাজের যে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল, তা তাদের কখনও দেওয়া হয়নি।'
উল্লেখ্য, মোদী যে অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই ভাষণ দেন, সেই এলাকার খুব কাছেই রয়েছে ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা। যে জায়গার সঙ্গে আজও জড়িয়ে রয়েছে বিরসা মুণ্ডার নাম ও আবেগ। কারণ, তিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিরসা মুণ্ডার ১৫০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে (১৫ নভেম্বর, ২০২৪) মোদী সরকার জনজাতীয় গৌরব দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ৬,০০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
অন্যদিকে, একই দিনে একই উপলক্ষে দেশের রাজধানী শহর দিল্লির সরাই কালে খান মোড়ে বিরসা মুণ্ডার একটি মূর্তি উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
মোদীর অভিযোগ, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তাঁর পরিবারের উত্তরসূরিদের মহিমান্বিত করতেই বিরসা মুণ্ডা-সহ ভারতের সেই সমস্ত সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি, যাঁরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, 'এত সবকিছু শুধুমাত্র একটাই কারণে করা হয়েছিল। যাতে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক দল ও একটি পরিবারের সদস্যদেরই মহিমান্বিত করা যায়।'
মোদী প্রশ্ন তোলেন, 'ভারতের সংস্কৃতি রক্ষা করতে এবং দীর্ঘ সময় ধরা চলা স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল, আদিবাসী সমাজ তাদের অন্যতম। কিন্তু, স্বাধীনতার পর আদিবাসী সমাজের সেই অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। যাতে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক দলকেই স্বাধীনতা লাভের কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে, সেই কারণে অত্যন্ত স্বার্থপরের মতো এই কাজ করা হয়েছিল।...'
'...কিন্তু, যদি একটিই পরিবার স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিল, তাহলে বিরসা মুণ্ডার নেতৃত্বে উলুগান আন্দোলন হল কেন? সাঁওতাল বিদ্রোহ কী ছিল? কোল বিদ্রোহ তাহলে কী ছিল?'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত হল, বিরসা মুণ্ডার আবেগ হাতিয়ার করে বিজেপি আদতে আদিবাসী সমাজের সমর্থন নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া। সেই কারণে মোদী থেকে শাহ - সকলেই ময়দানে নেমে পড়েছেন।
দিল্লিতে বিরসা মুণ্ডার মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে শাহের গলাতেও শোনা গিয়েছে মোদীর সুর। তিনি বলেন, 'বিরসা মুণ্ডা খুব অল্প বয়সেই ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন।' প্রসঙ্গত, বিরসা মুণ্ডার মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ২৫ বছর বয়সে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে শাহ বলেন, 'যখন সারা ভারত এবং বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশে ব্রিটিশরা শাসন করত, সেই সময় বিরসা মুণ্ডা সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করেন এবং ধর্মান্তকরণের প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। তাঁর একাগ্রতা এবং সাহসই পরবর্তীতে তাঁকে এই দেশের একজন নেতা হিসাবে উন্নীত করেছিল।'
প্রসঙ্গত, বিরসা মুণ্ডাই হলেন প্রথম আদিবাসী নেতা, যিনি জল, জঙ্গল ও জমির (বনভূমি) উপর আদিবাসী সমাজের অধিকার নিশ্চিত করতে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।