পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর ‘নিরাপত্তার গলদ’ নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করল সুপ্রিম কোর্ট। সেই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সেই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং পঞ্জাব সরকারকে তদন্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি তদন্তের ধরন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্র।
গত সপ্তাহে পঞ্জাবের ফিরোজপুরে প্রধানমন্ত্রীর 'নিরাপত্তায় গলদের' ঘটনায় আদালতের নজরদারিতে তদন্তের আর্জির শুনানিতে সোমবার পঞ্জাব সরকারের তরফে আইনজীবী ডিএস পাতওয়ালিয়া জানান, কোনওরকম কথা না শুনেই পুলিশ আধিকারিকদের শো-কজ নোটিশ ধরিয়েছে কেন্দ্র। তিনি বলেন, 'যখন শুনানি থমকে আছে, তখন কীভাবে শো-কজ নোটিশ পাঠানো হয়? কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটির থেকে আমি সঠিক বিচার পাব না।' আদালতের নজরদারিতে তদন্ত কমিটি গঠনের আর্জি জানান তিনি।
তারইমধ্যে কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ‘নিরাপত্তার গলদের’ জন্য পঞ্জাব সরকারই দায়ী। স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) 'ব্লু বুকের' বিষয়টি তুলে ধরেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। যে এসপিজি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে। মেহতা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর কনভয় যে জায়গায় পৌঁছেছিল, সেখান থেকে বিক্ষোভস্থলের দূরত্ব ১০০ মিটার ছিল। ব্লু বুক অনুযায়ী, নিয়মগুলি যাতে কঠোরভাবে পালন করা হয়, তার দায়িত্ব থাকে (রাজ্যের) আধিকারিকদের উপর। যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়, সেজন্য এরকম আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া উচিত রাজ্যের।' সঙ্গে তিনি দাবি করেন, উড়ালপুলের কাছে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কিছু জানানো হয়নি। 'রাজ্য সরকার যে ওঁদের (পুলিশ আধিকারিকদের) হয়ে সওয়াল করছে, তা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবশ্যই দেখতে হবে যে কোথায় নিরাপত্তায় গলদ হয়েছে।'
যদিও কেন্দ্রের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি হিমা কোহলি। তিনি বলেন, 'শো-কজ নোটিশ দর্শিয়ে আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন যে কীভাবে এগোতে চান। তাহলে সেই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপের কী দরকার আছে?' সঙ্গে তিনি বলেন, 'আপনাদের শো-কজ নোটিশ পুরোপুরি স্ব-বিরোধী। কমিটি গঠন করে আপনার এসপিজি আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে চান। তারপর রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজিপিকে দোষী বলে দেখান। তাঁদের কে দোষী বলে দেখাচ্ছে?' পঞ্জাবের মুখ্যসচিব এবং ডিজিপি যে মামলায় যুক্ত আছেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলে, 'রাজ্য সরকার এবং আবেদনকারী সঠিক তদন্ত চান। আপনারা সঠিক তদন্তের বিপক্ষে হতে পারেন না। তাহলে এই প্রশাসনিক এবং তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তদন্তের বিষয়টা কী?'
প্রধানমন্ত্রীর ‘নিরাপত্তায় গলদ’ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যে কমিটির নেতৃত্বে আছেন ক্যাবিনেট সচিব (সুরক্ষা) সুধীর কুমার সাক্সেনা। কমিটিতে আছেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) যুগ্ম অধিকর্তা বলবীর সিং এবং স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) আইজি এস সুরেশ। পঞ্জাব সরকারের আইনজীবী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রধান সেই কমিটির তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে আছেন। তারইমধ্যে কমিটির তদন্তের ধরন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ার পর সুর নরম করেন সলিসিটর জেনারেল। শেষপর্যন্ত নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।