পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হলেন এক পুলিশ আধিকারিক!তাও আবার সমকাজে নিযুক্ত এক মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে! ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট থানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম অভিষেক রায়। তিনি পার্ক স্ট্রিট থানায় কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও অভব্য আচরণের অভিযোগ তুলেছেন কর্তব্যরত এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার!
ঠিক কী ঘটেছিল ওই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে?
সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত খবর অনুসারে, এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ৪ অগাস্ট এবং ৫ অগাস্টের রাতে। দুর্গাপুজো উপলক্ষে পোশাক দেওয়া হবে বলে ওই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে জানান এসআই অভিষেক রায়।
মহিলার দাবি, এরপর অভিষেক রায় তাঁকে থানার রেস্ট রুমে ডেকে পাঠান। তিনি মহিলাকে জানান, ওই ঘরেই পুজোর পোশাক দেওয়া হবে তাঁকে। মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারের অভিযোগ, এরপর রেস্ট রুমে তাঁর জন্য বরাদ্দ পুজোর পোশাক নিতে যান তিনি।
আর, সেই সময়েই ওই রেস্ট রুমের ভিতর এসআই অভিষেক রায় তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন এবং তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। এই ঘটনার পর ওই রাতেই পার্ক স্ট্রিট থানার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান সংশ্লিষ্ট মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করে পুলিশ প্রশাসন। অভিযুক্ত অভিষেক রায়কে প্রথমে তাঁর ডিউটি থেকে 'ক্লোজ' করা হয়। তারপর অভিষেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। সবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবারই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে।
এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে পুলিশ সমাজের রক্ষক, সেই পুলিশেরই হাতে, থানার ভিতরে, সেখানেই কর্মরতা এক মহিলা যদি লাঞ্ছিতা হন, তাহলে বাকি নারীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা কে দেবে?
বিষয়টি সামনে আসার পর প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকরা পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিশিষ্টরা বলছেন, আরজি কর কাণ্ডের পর এত আন্দোলন হল। তারপরও যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বুঝতে হবে, মহিলাদের প্রতি অপরাধের প্রবণতা এক ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কলকাতার পার্ক স্ট্রিট থানা এর আগেও একাধিকবার বিতর্কে কেন্দ্রে এসেছে। যার মধ্যে অন্যতম পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড। সেই সময়ে অভিযোগ উঠেছিল, সেই ঘটনায় নিগৃহীতা মহিলা যখন পার্ক স্ট্রিট থানায় গিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তখন সহযোগিতা পাওয়ার বদলে এক চরম অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
তারপর বহু বছর কেটে গিয়েছে। হালেই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে শহর কলকাতা থেকে শুরু করে জেলা। তারপরও জয়নগরে বালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে।
সোমবারই ভাঙড়ের এক বধূ অভিযোগ করেছেন, প্রতিবেশী যুবক গোপনে তাঁরে ভিডিয়ো তুলে তা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁকে একাধিকবার সহবাস করতে বাধ্য করেছেন।
এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সুবিচারের আশায় সবার আগে মানুষ যার কাছে ছুটে যায়, এবার সেই পুলিশের বিরুদ্ধেই উঠল শ্লীলতাহানির অভিযোগ!