মাত্র ৬৫,০০০ টাকা! কট্টর দক্ষিণপন্থী দুই হিন্দু নেতার বাড়িতে পেট্রল বোমা ছোড়ার জন্য দুষ্কৃতীদের ভাড়া করতে এটুকুই খরচ করতে হয়েছিল মূলচক্রীদের!
কোথায় কী ঘটেছিল?
প্রথমে গত ১৬ অক্টোবর এবং পরে ২ গত নভেম্বর - পঞ্জাবে দুই হিন্দু নেতার বাড়ির সামনে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। পরে জানা যায়, দুষ্কৃতীরা ওই দুই নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা ছুড়েছে। ঘটনার তদন্তে নামে পঞ্জাবের লুধিয়ানা পুলিশ। জানা যায়, ৬৫,০০০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা!
কীভাবে হয়েছিল টাকার লেনদেন?
পুলিশের তদন্ত আরও জানা গিয়েছে, মোট চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত, নবনশহরের রোহন এলাকার বাসিন্দা রবীন্দরপাল সিং ওরফে রবির পরিচিতরা ওই চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন।
কে বা কারা ওই চারটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ৬৫,০০০ টাকার লেনদেন করেছেন, তাঁদের খোঁজ পেতে ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিচ্ছে লুধিয়ানা পুলিশ।
আরও কোনও হিন্দু নেতা কি হামলাকারীদের নিশানায় রয়েছেন?
আগামী দিনে অথবা ভবিষ্যতে আর কোনও নেতার উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, লুধিয়ানা পুলিশের তরফে তারও তদন্ত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পঞ্জাব পুলিশের লুধিয়ানা কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স উইং এবং লুধিয়ানা পুলিশ কমিশনারেট গত মঙ্গলবার যৌথ অভিযান চালিয়ে চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।পুলিশের দাবি, দুই হিন্দু নেতার বাড়িতে পেট্রল বোমা ছোড়ার ঘটনায় এই চারজন জড়িত রয়েছেন।
কাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল?
গত ১৬ অক্টোবর প্রথম হামলাটি চালানো হয়েছিল শিব সেনা (ভারত বংশী) নেতা যোগেশ বক্সীর বাড়িতে। তারপর গত ২ নভেম্বর দ্বিতীয় হামলাটি চালানো হয়েছিল শিব সেনা (হিন্দ) নেতা হরকিরন্ত সিং খুরানার বাড়ি লক্ষ্য করে।
কারা এই হামলা চালিয়েছিল?
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত রবিকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনায় ধৃত অন্য তিন অভিযুক্ত হলেন - লুধিয়ানার বুথগড় গ্রামের বাসিন্দা জসবিন্দর সিং ওরফে বিন্দর, এবং রোহনের দুই বাসিন্দা, যথাক্রমে - মণীশ শহিদ ওরফে সঞ্জু (৩০) ও অনিল কুমার ওরফে হানি।
পুলিশের দাবি, এই জোড়া হামলায় জড়িয়ে রয়েছেন আরও এক ব্যক্তি। তাঁর নাম - লভপ্রীত সিং ওরফে মনু বাবা। যদিও, নবনশহরের বাসিন্দা মনু বাবার সন্ধান এখনও পায়নি পুলিশ। তাঁর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এই ঘটনায় দু'টি মোবাইল ফোন এবং একটি লাল রঙের মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, হামলার ঘটনায় এই মোটরবাইক ও মোবাইল ফোন দু'টি ব্যবহার করা হয়েছিল।
পুলিশের দাবি, এই জোড়া হামলার নেপথ্য়ে খলিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর চক্রান্ত রয়েছে। হামলার মূলচক্রী হরজিৎ সিং লড্ডি এবং সাবি - দু'জনই 'বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল' বা বিকেআই - গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত।
পাশাপাশি, পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই জোড়া হামলায় ধৃতদের মধ্যে অন্যতম মণীশের বিরুদ্ধে আরও একটি খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর নেতা, নঙ্গলের বাসিন্দা বিকাশ প্রভাকর। অভিযোগ, সেই ঘটনায় বিকাশকে খুন করার জন্য দুষ্কৃতীদের ব্যবস্থা করেছিলেন এই মণীশই।
লুধিয়ানা পুলিশের এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই ঘটনার যাঁরা মূলচক্রী, তাঁদের কাছ থেকে চারটি ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টের মাধ্যমে ৬৫,০০০ টাকা পেয়েছিলেন রবি।
পুলিশের ওই আধিকারিক বলেন, 'এই চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই রবির পরিচিতদের। পুলিশ ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত তথ্যাবলী হাতে পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির কর্তৃপক্ষকে ওই চারটি লেনদেন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে।'
এই 'অপারেশন' চালানোর বিনিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক দুষ্কৃতীকে ওই ৬৫,০০০ টাকা ভাগ করে দিতে বলা হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ধৃত মণীশের সঙ্গে অন্যতম মূল চক্রী সাবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ছিল। তবে, প্রথম হামলার আগেই অপর চক্রী লড্ডির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন রবি।
তারপর থেকে রবি এবং লড্ডির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হত। এই কারণেই রবির পরিচিতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই ৬৫,০০০ টাকা পাঠানো হয়েছিল এবং তাঁকেই ওই টাকা দুষ্কৃতীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলা হয়েছিল।