প্রাক্তন মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতের খুনের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে হাড় হিম করে দেওয়া একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তেমনই একটি তথ্য বলছে, কীভাবে প্রেমিক সাহিল শুক্লার সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় সৌরভকে খুনের ছক কষেছিল তাঁর স্ত্রী মুসকান রাস্তোগি। খুনের আগে স্বামীকে যাতে অজ্ঞান করা যায়, তার পন্থা খুঁজতে ইন্টারনেটের আশ্রয় নিয়েছিল সে। গুগলে খোঁজ করেছিল, কীভাবে ঘুমের ওষুধ বা মাদক মেশানো লাউয়ের কোফতা তৈরি করতে হয়!
পুলিশ সুপার (শহর) আয়ুষ বিক্রম সিং এই মীরাট খুন নিয়ে বিস্তারিত তথ্যাবলী, ঘটনার মোডাস অপারেন্ডি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন। সেখানেই মাদক বা ঘুমের ওষুধ মেশানো লাউয়ের কোফতা প্রসঙ্গে মুসকানের তথ্যতলাশের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৩ মার্চ (২০২৫) স্ত্রী এবং মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সৌরভ (২৯)। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর মা - রেণুর বানানো লাউয়ের কোফতা।
এদিকে, মুসকান (২৭) গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে স্বামীকে খুনের ছক কষছিল। গত ৩ মার্চের ঘটনায় সে সেই সুযোগ পেয়ে যায়। সৌরভ সঙ্গে করে কোফতা এনেছিলেন, তা গরম করার সময়েই তাতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় মুসকান। সেই খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন সৌরভ। এরপরই প্রেমিক সাহিল শুক্লাকে (২৭) সেখানে ডেকে আনে মুসকান। সেখানেই সৌরভকে খুন করে লাশ গুম করার ভয়াবহ চেষ্টা করা হয়।
এই গোটা ঘটনাটি ঘটে সৌরভের ইন্দিরা নগরের ভাড়া বাড়িতে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, মুসকান আর সাহিলের প্রেমে নাকি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সৌরভ! সেই কারণেই তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, সৌরভ যখন ঘুমে একেবারে আচ্ছন্ন, তখনই ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীরে একের পর এক কোপ মারা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না দেহ থেকে প্রাণবায়ু সম্পূর্ণ বেরিয়ে যায়, ততক্ষণ এই নৃশংস হামলা চলতেই থাকে!
পুলিশের তদন্তে আরও উঠেছে, মুসকান স্বামীকে খুন করতে বদ্ধপরিকর হলেও খুনের দায় যাতে তার বা তার প্রেমিকের ঘাড়ে যাতে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করার সবরকম চেষ্টা করেছিল। গুগলে ঘুমের ওষুধ ও মাদকের সন্ধান চালিয়েছিল সে। এমনভাবে সেই ওষুধ ও মাদক সংগ্রহ করতে চেয়েছিল, যাতে তা কারও নজরে না আসে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সারদা রোডে এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে মুসকান। রোগী হিসাবেই তাঁর কাছে যায় সে। চিকিৎসকের কাছে দাবি করে, সে ভীষণভাবে হতাশায় ভুগছে। তাই, ডাক্তারবাবুকে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দিতে বলে।
কিন্তু, চিকিৎসক তাকে যে ওষুধ লিখে দেন, এবং তার যে ডোজ প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করে দেন, তা সৌরভকে চিরতরে ঘুমের দেশে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে বাধ্য হয়েই গুগলে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধের সন্ধান শুরু করে মুসকান।
এরপর ওই প্রেসক্রিপশনেই কড়া ডোজের সেইসব ঘুমের ওষুধের নাম যোগ করা হয়। তারপর সেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে খারিয়া নগরের একটি ওষুধের দোকান থেকে সেসব কিনে নিয়ে আসে মুসকান ও সাহিল।
এছাড়াও, এই যুগল মাংস কাটার দু'টি ধারালো ছুরি কেনে। যার দাম পড়ে ৮০০ টাকা। সেইসঙ্গে, ৩০০ টাকা দিয়ে একটি রেজার এবং প্রচুর পলিথিন ব্যাগ কেনা হয়। পুলিশের তদন্তে এর সবটাই সামনে আসে।