সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়া-উর-রহমান বার্ক। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, তিনি নাকি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশকে উস্কানি দিয়ে জমায়েত করিয়েছিলেন এবং অশান্তি ছড়িয়েছিলেন। এবার সেই রাজনীতিক তথা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই রুজু করা হল বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা বার্কের বাড়িতে এসেছিলেন মিটারের রিডিং নিতে। সেই সময়ে নাকি কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পান তাঁরা।
প্রাথমিক অনুসন্ধান করে তাঁরা বুঝতে পারেন, সপা সাংসদের বাড়িতে এমন একাধিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চলছে, যেগুলির সংযোগ তাঁর বাড়ির বৈধ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনের সঙ্গে নেই! এরপরই বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকদের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, ওই বাড়িতে অবৈধভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ফ্রিজ প্রভৃতি চালানো হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তরফে আরও দাবি করা হয়, বার্কের বাড়িতে যে বৈধ বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে, তার মিটারের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২ কিলোওয়াট। অথচ, তাঁর বাড়িতে বিদ্যুতের লোড রয়েছে ১৬,৪৮০ ওয়াটের!
সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে প্রথম সরব হয়েছিলেন মহকুমাশাসক সন্তোষ ত্রিপাঠী। এ নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। সেই অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করতেই সাংসদের বাড়িতে পৌঁছে যান বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধিরা। তখনই পুরো বিষয়টি তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়।
বোঝা যায়, সাংসদের বাড়িতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বাড়ির বৈধ মিটারের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি! এরপরই ওই বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।
এরপর মঙ্গলবার ওই বাড়িতে লাগানো পুরোনো মিটারটি খুলে সেই জায়গায় নতুন একটি স্মার্ট মিটার লাগিয়ে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ দফতরের তরফে। যাতে কোনও অবস্থাতেই আর বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা না ঘটে।
যদিও বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ একবাক্যে খারিজ করে দিয়েছেন সাংসদের আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, ওই বাড়িতে মোট দু'টি মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে যার সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৫ কিলোওয়াটেরও বেশি।
এছাড়াও, ওই বাড়িতে সোলার পাওয়ার বা সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে এবং নিজস্ব জেনারেটরও আছে ওই পরিবারের। বাড়িতে মাত্র চারজন সদস্য থাকেন। এই ঘটনায় প্রশাসনের তরফে তোলা অভিযোগের জবাব দিতে যথাযথ পদক্ষেপ করার বার্তা দিয়েছেন বার্কের আইনজীবী। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকরা বলছেন, যে দু'টি মিটারের কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে একটির রিডিং ছিল শূন্য!
এসবের মধ্যেই আবার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাংসদ বাবার বিরুদ্ধে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। তারা সবটাই খতিয়ে দেখছে।
পুলিশের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ চুরি সংক্রান্ত একটি এফআইআর ইতিমধ্যেই দায়ের করা হয়েছে। সাংসদের বাবার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ-আধিকারিকদের হুমকি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই অভিযোগের ভিত্তিতেও এফআইআর করা হবে।