বিশাল জয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী বাছতে গিয়ে খেতে হয়েছে হোঁচট। এরই মাঝে এবার শতাব্দী প্রাচীন দলকে কর্ণাটকের জয় নিয়ে সতর্ক করে দিলেন প্রশান্ত কিশোর। কংগ্রেসকে ভোটকুশলী পিকে-র স্পষ্ট বার্তা, এবারে ভালো ফল করার অর্থ এই নয় যে আগামী লোকসভা নির্বাচনেও এই ফলই হবে। বিহারে নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচি 'জন সূরয'-এর ফাঁকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে প্রশান্ত কিশোর বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের কোনও যোগ নেই। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে কর্ণাটকে কংগ্রেস ৮০টি আসন জিতেছিল ২২৪টির মধ্যে। জেডিএস-এর সঙ্গে মিলে তারা সরকারও গঠন করেছিল বিজেপিকে পিছনে ফেলে। তবে ২০১৯ সালে কর্ণাটকে ২৮টির মধ্যে মাত্র একটি আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস।
এদিকে পদযাত্রার সময় পায়ের মাংশ পেশি ছিঁড়ে যাওয়ায় আপাতত অজ্ঞাত স্থানে বিশ্রামে আছেন প্রশান্ত কিশোর। সেখান থেকেই বিবৃতিতে কংগ্রেসেকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান পিকে। তিনি বলেন, 'কর্ণাটকে কংগ্রেসের সাফল্যের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাতে চাই। তবে আমি দলের নেতা ও কর্মীদের সতর্ক করতে চাই যে লোকসভা ভোটের ফলাফলের ইঙ্গিত কিন্তু বিধানসভা ভোটের ফলাফলে মেলে না। এই ভুল যেন না করে কংগ্রেস।' প্রশান্ত কিশোর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে, ২০১৩ সালে কংগ্রেস কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে মোদী ঝড়ের কারণে লোকসভা নির্বাচনে উড়ে গিয়েছিল তারা। এদিকে ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যে হেরেছিল বিজেপি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই সবকটি রাজ্যে দুর্দান্ত ফল করে কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছিল গেরুয়া শিবির।
প্রশান্ত কিশোর আরও বলেন, 'সবারই হয়ত মনে আছে যে ২০১২ সালে সমাজবাদী পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। এর মাত্র দুই বছর পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭৩টিতেই জয়লাভ করেছিল।' উল্লেখ্য, প্রশান্ত কিশোর বিগত কয়েক বছরে বিজেপি বিরোধী ভুটকুশলী হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছেন। তবে তাঁর উত্থান ২০১১ সালে মোদীর হয়ে নির্বাচনী অঙ্ক কষে। ২০১১ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর হয়ে প্রচার পরিকল্পনা করেছিলেন পিকে। পরে ২০১৪ সালেও লোকসভা নির্বাচনে মোদীর উত্থানের নেপথ্যে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। এরপর নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমকে স্ট্যালিন, জগন্মোহন রেড্ডির প্রচার পরিকল্পনা করেছেন। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের হয়ে ভোটের অঙ্ক কষে অবশ্য 'ফেল' করেছিলেন পিকে। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত বাকি সব পরীক্ষাতেই পাশ করেছেন তিনি। তবে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোটকুশলী থেকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন তিনি। এর আগে জেডিইউ-তে নীতীশের সঙ্গী হিসেবে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। তবে পরে মতভেদের কারণে নীতীশের দল ছেড়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালের পর পিকে-র কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বিহার জুড়ে নিজের ব্যক্তিগত পদযাত্রা শুরু করেন তিনি।