তুমুল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিন্দুকদের জল রাখতে বলেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী শুনে যাঁরা ‘নড়ে গিয়েছিলেন’, তাঁদের খোঁচা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত মঙ্গলবার যখন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হল, তখন তাঁর কার্যত ঢোঁক গেলার জোগাড় হল। কারণ দেশে ৩০৩টি আসনের কাছাকাছি গেল না বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বিজেপি বৃহত্তম দল হবে বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেটাও দূর-দূরান্ত দিয়ে মেলেনি। সেই পরিস্থিতিতে তাঁকে তুমুল খোঁচা দিতে ছাড়লেন না নেটিজেনদের একাংশ। পিকে নিজে কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁর দিকে অসংখ্য বাঁকা কথা ধেয়ে এল। খোঁচা দিতে ছাড়লেন না তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাও।
পিকে ঠিক কী বলেছিলেন?
লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে একাধিক সাক্ষাৎকারে পিকে দাবি করেছিলেন যে এবার দেশে ৩০৩টি আসন পাবে বিজেপি বা তার থেকে বেশি সংখ্যক আসন পাবেন নরেন্দ্র মোদীরা। শুধু তাই নয়, বাংলায় তৃণমূলের ভরাডুবি হবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন পিকে। তিনি দাবি করেছিলেন যে বাংলায় একক বৃহত্তম দল হবে বিজেপি।
বিরোধীরা যদিও সেই ভবিষ্যদ্বাণীতে পাত্তা দিতে রাজি ছিলেন না। তাতে পিকে পিছু হটেননি। বরং তুমুল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গত ২৩ মে তিনি বলেছিলেন যে শরীর এবং মাথা যাতে শরীরে জলের অভাব না হয়, সেজন্য জলপান করা ভালো। যাঁরা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে নড়ে গিয়েছেন, তাঁদের অতি অবশ্যই ৪ জুন নিজেদের হাতের কাছে প্রচুর জল রাখা উচিত। সেইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, '২০২১ সালে ২ মে এবং পশ্চিমবঙ্গের কথা মনে রাখবেন (পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছিল)।'
তবে সেখানেই থামেননি পিকে। ১ জুন এক্সিট পোলের ফলাফল (দেশে বিজেপির বিপুল জয় এবং বাংলায় তৃণমূলের ভরাডুবি) সামনে আসার পরে তিনি বলেছিলেন, 'পরেরবার যখন নির্বাচন এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে, তখন ফাঁকা বসে থাকা জালি সাংবাদিক, বড়-বড় কথা বলা রাজনৈতিক নেতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞদের উপর নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।'
নির্বাচনের ফলাফলে ‘ফেল’ পিকের ভবিষ্যদ্বাণী
মঙ্গলবার সকালে প্রথম ৩০-৪৫ মিনিটের পর থেকেই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে বিজেপি ৩০৩টি আসন পাচ্ছে না। এমনকী এককভাবে ম্যাজিক ফিগার পার করতে পারেনি বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির আসন বৃদ্ধি তো দূর অস্ত, গতবার জেতা একাধিক আসনও ধরে রাখতে পারছে না বিজেপি। উলটে ৩০-র দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: WB Lok Sabha Vote Counting Live Updates: ১ লাখের বেশি ভোটে হারলেন দিলীপ, 'হারাল' BJP-ই?
নেটপাড়ার খোঁচা
সেই পরিস্থিতিতে প্রশান্তকে তুমুল খোঁচা দিয়েছেন নেটিজেনদের একাংশ। এক নেটিজেন বলেন, 'এই নির্বাচনের সবথেকে বড় হেরো হলেন প্রশান্ত কিশোর।' অপর একজন আবার খোঁচা দিয়ে বলেন, 'প্রশান্ত কিশোর এখনও মুখ খুলেছেন?' এক নেটিজেন বলেন, ‘আজ একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে বিজেপির মুখোশ পরেছিলেন পিকে। আর বিহারে তিনি যে যাত্রা করছিলেন, সেটা পুরোপুরি ভাওঁতা।’
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
পিকের সেই ভবিষ্যদ্বাণী 'ফেল' করে যাওয়ায় তৃণমূলের সমর্থক তথা ইনফ্লুয়েন্সার সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পিকে যা সব বলছিলেন, তাতে ওঁকে বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র বলে মনে হচ্ছিল। ওই ট্রোলারদের মতো (হয়ে উঠেছিলেন)। যাঁরা ট্রোল করেন, তাঁরা আজ সকালে তৃণমূলের আসন সংখ্যা ৩০-র কাছে পৌঁছে যাওয়ার পরও বলছিলেন যে দিনের শেষে সংখ্যাটা সাত-আটে নেমে আসবে। ওই সব ট্রোলারদের মতোই কথা বলছিলেন পিকে।’
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পিকে আমাদের কাছে একজন বহিরাগত। উনি হয়ত বাংলার মানুষের মনের কথাটা হয়তো ঠিকঠাক বুঝতে পারেননি। নাহলে বলতে হয় যে কোনও কারণে বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কথা বলেছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে ওঁনার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, সেটা বিবেচনা করে কথা বলা উচিত নয়। মানুষকে ছোট করেছিলেন। ভেবেছিলেন যে মানুষ তাঁর সেই কথা বিশ্বাস করে নেবেন।’