জেনারেল কাসেম সোলেইমানির হত্যার প্রতিহিংসা নিতে আমেরিকার নাগরিক এবং সম্পত্তি নিশানা করে আক্রমণ হানলে ইরানের বিরুদ্ধে ‘অতি দ্রুত ও অতি কঠোর’ ব্যবস্থা নেবে ওয়াশিংটন। শনিবার তেহরানকে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমেরিকান সেনাবাহিনীর ইতিমধ্যে ইরানে ৫২টি নিশানা বেছে রেখেছে। রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস-এর প্রধান সোলেইমানির মৃত্যুর পরে ইরানি ব্যালিস্টিক মিসাইল ইউনিটগুলিকে উচ্চ পর্যায়েোর সতর্কতা জারি করার খবর পেয়ে এই হুঁশিয়ারি জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, সম্প্রতি ইরানের এক সামরিক আধিকারিক মন্তব্য করেছেন যে, তেল আভিভে ইরানি সেনাঘাঁটির নিশানায় বেশ কিছু আমেরিকান শিবির ও দফতর রয়েছে।
খবর পাওয়া মাত্র ফ্লোরিডার বেসরকারি রিসর্ট মারা-আ-লাগোতে ছুটি কাটানোর অবসরে ট্রাম্প টুইটারে ঘোষণা করেছেন, ‘এটা সতর্কতা হিসেবে ধরা হোক যে, যদি ইরান কোনও আমেরিকান নাগরিক, আমেরিকান সম্পত্তির উপর আঘাত হানে, তা হলে আমরাও ৫২টি ইরানি নিশানা স্থির করে রেখেছি, যেগুলি ইরান ও তার সংস্কৃতির কাছে অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের ও গুরুত্বপূর্ণ। ওই নিশানাগুলি এবং সমগ্র ইরানকে লক্ষ্য করে অতি দ্রুত ও অতি কঠোর প্রত্যাঘাত করা হবে।’
আমেরিকান নাগরিক বলতে এই ক্ষেত্রে তিনি ইরানের হাতে বন্দি ৫২ জন মার্কিন কূটনীতিক-সহ আমেরিকাবাসীর কথা বোঝাতে চেয়েছেন। আয়াতোল্লা আলি খামেইনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লবের জেরে ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে তাঁদের আটক করে ইরানের ছাত্রবাহিনী।
এর পরে আর একটি টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা আর কোনও হুঁশিয়ারি চায় না!’
গত শুক্রবার বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে আমেরিকান ড্রোন হানায় নিহত হন আয়াতোল্লাহ আলি খামেইনি ঘনিষ্ঠ জেনারেল কাসেম সোলেইমানি একই সঙ্গে মারা যান ইরানের মদতপুষ্ট ইরাকের এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নেতা ও আরও ৫ জন। এই হত্যাকাণ্ডের যুক্তি হিসেবে ওয়াশিংটন দাবি করে, আমেরিকা ও তার সেনাবাহিনীর উপরে ভয়াবহ হামলার ছক কষছিলেন সোলেইমানি।
আমেরিকার এই পদক্ষেপে ইরান ও তার সঙ্গী রাষ্ট্রগুলি ক্ষোভ প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি হুমকি দেন, নিহত জেনারেলের আত্মীয়-সহ প্রত্যেকে এই হত্যার প্রতিহিংসা নিতে তৈরি হয়েছে। ঘটনার পরে ইরানি সেনাবাহিনীর এক কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলামআলি আবুহামজেদ শনিবার বলেন, ওই অঞ্চলে আমেরিকার ৩৫টি ঘাঁটি ইরান ও তেল আভিভের নিশানায় রয়েছে। এ ছাড়া, পশ্চিম দুনিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী, ওমান সাগর ও পারস্য উপসাগর দিয়ে বহু মার্কিন যুদ্ধজাহাজ যাতায়াত করে বলেও ইঙ্গিত করেন ওই সেনানায়ক।
মনে করা হচ্ছে, ইরানের সেনাকর্তার হুমকি কানে যাওয়ার পরেই পালটা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর উপর নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল ইউনিটগুলিকে প্রস্তুত থাকার জন্য সম্প্রতি সতর্কতা জারি করেছে তেহরান।
পাশাপাশি, সোলেইমানি হত্যার পরে ইরানের প্রত্যাঘাতের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত মার্কিন সেনাও। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, ‘সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ করার ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনই ওই পদক্ষেপ না করলে আরও বড় ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে শক্তি বাড়াতে অতিরিক্ত ৩,৫০০ বাহিনী মোতা.য়েন করেছে হোয়াইট হাউস। ইরানের মজত পাওয়া শিয়া সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী কাতা’ইব হেজবোল্লার পাঁচটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমানহানা চালিয়েছেন মার্কিন বায়ুসেনা। আঘাত হানা হয়েছে পশ্চিম ইরাকের তিনটি এবং পূর্ব সিরিয়ার দু’টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে।