আয়ুর্বেদিক ওষুধে সম্পূর্ণ সারানো যায় COVID-19। মঙ্গলবার এই দাবি জানালেন কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক। তাঁর দাবি, সাম্প্রতিক সংকটের যখন কোনও সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, তখন সনাতন বৈদিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেই করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে।
এর আগে একই দাবি করে নায়েক বলেছিলেন, আয়ুর্বেদিক ওযুধ ব্যবহার করেই করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লস। কিন্তু সেই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দেয় বাকিংহাম প্যালেস।
এ দিন সেই প্রসঙ্গে পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নায়েক বলেন, ‘স্বীকার করতে নিশ্চয় কোনও অসুবিধা ছিল বলেই এ কথা অস্বীকার করেছেন প্রিন্স চার্লস। জানতাম উনি অস্বীকার করবেন। আমি ১০১% নিশ্চিত যে আয়ুর্বেদের ফলেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’
যদিও ঠিক কোন আয়ুর্বেদিক ওষুধে চার্লস সেরে ওঠেন, তা জানাননি মন্ত্রী। তাঁর মতে, একবার আয়ুর্বেদে উল্লিখিত সূত্রগুলি বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণিত হলেই দেশের করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় তা প্রয়োগ করা হবে। তাঁর দাবি, ‘যখন অ্যালোপ্যাথির মতো অন্য সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে, তখন আমাদের হাতে রয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারানোর অব্যর্থ আয়ুর্বেদিক দাওয়াই।’
শ্রীপদ নায়েকের অভিযোগ, Covid-19 চিকিৎসায় আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রয়োগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাধা দিচ্ছে একটি গোষ্ঠী।
তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আগাগোড়া অনুসরণ করছে, কারণ একমাত্র আয়ুর্বেদেই রয়েছে করোনার সমাধান। তাঁর দাবি, আয়ুর্বেদিক ওষুধের কার্যকারিতা হাজার হাজার বছর আগেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। সেই ওষুধ প্রজন্মের ধারাবাহিকতা মেনে বর্তমানেও সমান ভাবে ফলদায়ী।
তবে মন্ত্রী বলতে পারেননি, অত্যাধুনিক নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে আয়ুর্বেদিক ওযুধ প্রয়োগের সাফল্য কীভাবে কয়েক হাজার বছর আগে প্রমাণিত হতে পারে।
২০১৯ সালের শেষে চিনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া SARS-CoV2 করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে যে Covid-19 উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, এখনও পর্যন্ত তার সঠিক ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি বর্তমান বিশ্ব। যদিও বিশ্বজুড়ে এই রোগের টিকা আবিষ্কারের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
এই সমস্ত যুক্তির তোয়াক্কা না করে এ দিন কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রী দাবি করেছেন, আয়ুর্বেদিক ওষুধের সাহায্যে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করার বিষয়ে নির্দেশ জারি করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে জানানো হলে তাঁর নির্দেশে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নায়েক।
মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে। যদি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়, তা হলে ভাইরাস কোনও ক্ষতি করতে পারবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাস মানবদেহের শ্বাস প্রক্রিয়াকে প্রবাবিত করে বলে তারও সমাধান খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি নায়েকের।
ঘটনা হল, বিশ্বজুড়ে অসংখ্য পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা নয়, শ্বাস প্রক্রিয়াকে সরাসরি আক্রমণ করে করোনাভাইরাস। এই হামলা সামলাতে দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের বিরুদ্ধে পালটা আঘাত হানে। এর জেরে প্রতিরোধকারী অসংখ্য দেহকোষ ভাইরাস ও আক্রান্ত ফুসফুসের পেশিগুলির উপরে চূড়ান্ত আঘাত হানে। কিন্তু তার ফলে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা ফুসফুস। তারই জেরে শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তাতে মৃত্যুও অস্বাভাবিক নয়।
নায়েক অবশ্য এই তথ্য সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর দাবি, দেশের ৬০%-৭০% করোনা আক্রান্ত রোগী আয়ুর্বেদ, সিদ্ধ ও ইউনানি চিকিৎসায় উল্লিখিত ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেই সেরে উঠছেন।
তিনি জানিয়েছেন, একমাত্র ভারতেই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। সংক্রমণ সম্পর্কে কী করা উচিত এবং কী অনুচিত, তা জানিয়ে ইতিমধ্যে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।