সংসদের আবারও 'ভোকাল' প্রথমবারের সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বিজয় দিবস উপলক্ষে বলতে উঠে সোমবার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভারত সরকারের তরফ থেকে কাঙ্ক্ষিত ভূমকা নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের যুদ্ধে ভারতীয় সেনার কাছে রীতিমতো পর্যুদস্ত হওয়ার পর এই দিনটিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। যার ফল - স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের গঠন।
এদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত স্মরণ করেন ওয়েনাডের সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি জানান, যে বীর সেনাদের অনমনীয় সংগ্রাম সেই জয় এনে দিয়েছিল, তাঁদের তিনি প্রণাম জানাচ্ছেন। সেই সময়ে ভারতের যে আমনাগরিক বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে দেশের সেনা ও নেতৃত্বের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল, সেই মহান ভারতবাসীকে তিনি সম্মান জানাচ্ছেন।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই প্রসঙ্গে ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও প্রণাম জানান তাঁরই নাতনি, সাংসদ প্রিয়াঙ্কা। তিনি মনে করিয়ে দেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা নিদারুণ অত্যাচার চালাচ্ছে, তখন বাকি বিশ্ব শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও (প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন) তৎকালীন ভারত সরকার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশকে রক্ষা করতে।
অথচ, আজ সেই বাংলাদেশে সংখ্য়ালঘু নিপীড়ন চলছে। লাগাতার আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দু, খ্রিস্টান-সহ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানেই প্রিয়াঙ্কা দাবি তোলেন, এবার সময়ে এসেছে - ভারত সরকারের ফের একবার বাংলাদেশ ইস্যুতে পদক্ষেপ করার।
বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের হিংসা থামাতে মূলত দু'টি দাবি উত্থাপন করেছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর বক্তব্য, প্রথমত - ভারত সরকারকে অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত - ভারত সরকারকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অনাচার ও অত্যাচার বন্ধ করতে পদক্ষেপ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত অন্তত মোদী সরকারকে খুব বড় কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। যদিও ইতিমধ্যেই ভারতের বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফর করেছেন। সংখ্যালঘু নিধনের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু, তারপরও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি।
অন্যদিকে, আজ (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪) বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজয় দিবসকে 'ভারতের জয়' বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্যদিকে, বাংলাদেশে 'মহান বিজয় দিবস' পালনের অনুষ্ঠানে বর্তমান তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস যোগ দিলেও সেখানে ভারতের নামও উল্লেখ করেননি তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনার কাছে পাক বাহিনীর নতি স্বীকারের সাক্ষ্য - সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের বিখ্যাত ছবিটি পর্যন্ত তার স্থান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে! যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।