হজরত মহম্মদ ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্রদের বিতর্কিত কথার জেরে দেশে-বিদেশে মুখ পুড়েছে ভারতের। একের পর এক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এর বিরুদ্ধে বিবৃতি জারি করছে। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হচ্ছে। চাপের মুখে বিজেপি মুখপাত্র নুপূর শর্মা ও নবীন জিন্দালকে সাসপেন্ড করেছে দল। তবে দলের নেতাদের দাবি, চাপে পড়ে নয়, ভাবনা চিন্তা করেই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বরিষ্ঠ আধিকারিক জানান যে দল বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখার পরেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে মুখপাত্রদের সাসপেন্ড করা উচিত। একই সঙ্গে দলের তরফ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয় যে কোনও ধর্মকে অপমান করা সহ্য করবে না বিজেপি। প্রসঙ্গত, ২৬ মে এই বিতর্কিত কথা টিভি চ্যানেলে বলেন নুপূর। তখন থেকেই পশ্চিম এশিয়ার রাষ্ট্রদূতরা নিজেদের আপত্তির কথা ঘরোয়া আলোচনায় জানিয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু গত সপ্তাহের শেষে টুইটারে ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ার পরেই প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখে ওই সব দেশের প্রতিনিধিরা। বিজেপির দাবি, দলের দিল্লি মসনদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আট বছরের পূর্তি পালনে সব শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত ছিলেন। সেই কারণেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি এই দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় আরেকজন নেতা জানিয়েছেন যে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, বন্ধ ঘরেও যেভাবে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা, তাতেই কার্যত নুপূরদের ভবিষ্যত ঠিক হয়ে গিয়েছিল। শীর্ষনেতারা কড়া সিদ্ধান্ত নিতে রাজি হন তবে পুরো বিষয়টি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত জিন্দাল বিতর্কিত টুইট করেছিলেন পয়লা জুন।
প্রসঙ্গত, মিশর, ওমান, কাতার, সৌদি সহ একগুচ্ছ দেশ বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরকারি স্তরে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আরেক বিজেপি নেতা এই প্রসঙ্গে বলেন যে সকলকে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মন্ত্র প্রচার করতে বলা হয়েছে। এমন কিছু বলা উচিত নয় যাতে পার্টি ও দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়। দলের মধ্যে নিয়মিত কর্মশালা হয় মুখপাত্রদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য বলেও জানা গিয়েছে। তবে বিজেপি নেতারা মনে করছেন যে ধর্মের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কোনও কোনও ইস্যুতে চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন।
তবে যেভাবে বিদেশমন্ত্রকের তরফ থেকে নুপূর শর্মাকে কার্যত দলের অকিঞ্চিৎকর নেতা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে অখুশি বিজেপির একাংশ। কাতার ও কুয়েতে অবস্থিত হাইকমিশনাররা এই কথা বলেছেন। এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে দলের আদেশ তারা অবশ্যই পালন করবেন কিন্তু নুপূর তো হিন্দু দেবতাদের অসম্মানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছিল। সেই বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তাদের। একই সঙ্গে নুপূরের নিরাপত্তার কি হবে, সেটা নিয়েও উদ্বেগ উঠিয়েছেন তারা।