ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী স্থান ‘স্টোনহেঞ্জ’-এর ক্ষতি করার অভিযোগ উঠল পরিবেশকর্মী এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে দুই পরিবেশকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। দুই ব্যক্তিই ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’ সংগঠনের কর্মী। তাঁরা জীবাশ্ম তেল, গ্যাস ও কয়লার অতিরিক্ত ব্যবহারের বিরোধিতা করেতেই এই কাজ করেন। এ নিয়ে তিনি প্রতিবাদ জানাতে তাঁর স্টোনহেঞ্জে কমলা রং করেছিলেন। অভিযুক্ত দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
জীবাশ্ম তেল, গ্যাস ও কয়লার অতিরিক্ত ব্যবহারের বিরোধিতা করে ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’ নামের একটি সংগঠন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবেশকর্মী রাজন নাইডু এই সংগঠনের কর্মী। তিনি তাঁর এক সতীর্থর সঙ্গে স্টোনহেঞ্জে কমলা রঙের পদার্থ ঢেলে দিয়েছিলেন। তবে তাঁরা দাবি করেছেন, এটি ভুট্টা থেকে তৈরি প্রাকৃতিক হালকা রং এবং জলে ধুয়ে দিলে বা বৃষ্টি নামলেই এটি বিবর্ণ হয়ে যাবে। এই কাজের জন্য দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।
(আরও পড়ুন: আপনার একটি ছোট্ট পদক্ষেপ বাঁচাতে পারে পরিবেশকে, করুন এই কাজগুলি)
‘জাস্ট স্টপ অয়েল’ ইংল্যান্ডের একটি পরিবেশরক্ষাকারী সংগঠন, তারা তাদের উগ্র প্রতিবাদের জন্য পরিচিত। স্টোনহেঞ্জে কমলা রঙের পদার্থ ঢালার সময়ে সংগঠনের উভয় কর্মী জাস্ট স্টপ অয়েল ব্র্যান্ডের টি-শার্ট পরেছিলেন। দু’জনেই স্লোগান দিতে দিতে স্টোনহেঞ্জে কমলা রঙের স্প্রে করতে থাকেন। এ সময় নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারীরা তাঁদের থামান ও পুলিশের কাছে নিয়ে যান।
বার্মিংহামের রাজন নাইডুর বয়স ৭৩ বছর। দীর্ঘ দিন ধরেই পরিবেশরক্ষার নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। জানা গিয়েছে, এই সংগঠনের সঙ্গেও তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। এর আগেও নানা প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাজন। এই ঘটনায় রাজনের সঙ্গে ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বছর বয়সী ছাত্র নিমহ লিঞ্চ। তাঁরা সবাই কয়লা, জীবাশ্ম তেল এবং গ্যাসের অব্যাহত ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালাচ্ছিলেন। ‘হয় আমরা জীবাশ্ম জ্বালানী যুগের অবসান ঘটাব, নয়তো জীবাশ্ম জ্বালানী যুগ আমাদের শেষ করে দেবে,’ জাস্ট স্টপ অয়েল দ্বারা প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে রাজন নাইডুকে এমনই বলতে শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যেমন ৫০ বছর আগে, যখন বিশ্ব পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি কমাতে আন্তর্জাতিক চুক্তি ব্যবহার করত, আজ বিশ্বকে অবশ্যই আইন করে জীবাশ্ম তেল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’
(আরও পড়ুন: আফ্রিকায় প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে শরণার্থীদের আয়, পরিবেশ রক্ষায় বড় উদ্যোগ)
এর পাশাপাশি রাজন দাবি করেছেন, ‘সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আমরা যে কমলা কর্নফ্লাওয়ার রং ব্যবহার করেছি, তা শীঘ্রই বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে। কিন্তু তবে জলবায়ু এবং পরিবেশগত সংকটের ভয়াবহ পরিণতি চট করে মুছে ফেলা যাবে না।’
স্টোনহেঞ্জ হল একটি প্রাগৈতিহাসিক মেগালিথিক কাঠামো যা ইংল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। উইল্টশায়ারের সালিসবারি এলাকায় এটি অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন যে এটি আনুমানিক ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মিত হয়েছিল।