দিল্লির ক্যাফে মালিক পুনীত খুরানার আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদ শিরোনামে উঠে আসতেই নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট মুছে দিলেন তাঁর স্ত্রী মণিকা পাহওয়া।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এত দিন একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ছিল মণিকার। কিন্তু, এখন এখন সেই অ্য়াকাউন্ট সার্চ করলে ইংরেজিতে বার্তা আসছে - 'দুঃখিত, এই পেজটি উপলব্ধ নয়। যে লিঙ্কটি আপনি ফলো করেছেন, সেটি সম্ভবত ভুল, অথবা এই পেজটি মুছে দেওয়া হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিবিদ অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনা এখনও ভারতীয়দের মনে টাটকা রয়েছে। তাঁর অকাল প্রয়াণ এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অত্যাচারে কোনও না কোনও তরুণ নিজের জীবন শেষ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
দাবি করা হচ্ছে, সেই তালিকায় শেষ সংযোজন দিল্লির পুনীত খুরানা। সূত্রের দাবি, ৩০ ডিসেম্বর রাতে দিল্লি মডেল টাউনে নিজের বাড়িতেই আত্মঘাতী হন ওই তরুণ ব্যবসায়ী। ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।
পুনীতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, মৃত্যুর আগে প্রায় একঘণ্টার একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করে গিয়েছেন তিনি। সেই ভিডিয়োয় বেঙ্গালুরুর অতুল সুভাষের মতোই দিল্লির পুনীত খুরানা তাঁর উপর তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অত্যাচারের বর্ণনা করে গিয়েছেন!
তথ্য বলছে, পুনীতের স্ত্রী মণিকা সোশাল মিডিয়ায় শেষ পোস্ট করেছিলেন গত ২৬ ডিসেম্বর। সেই পোস্টে মণিকা দাবি করেছিলেন, তিনি একটি সুস্থ হয়ে ওঠার সফরের (জার্নি অফ হিলিং) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন! সেই একই পোস্টে তিনি দাবি করেছিলেন, 'এক সামগ্রিক বিষাক্ত ও আত্মকেন্দ্রিক অত্যাচারের পর' তিনি এই সুস্থ হয়ে ওঠার সফরে সামিল হয়েছিলেন।
সেই শেষ পোস্টে মণিকা কারও নাম নেননি। কিন্তু, এটা উল্লেখ করেছেন যে প্রতিদিন তাঁকে সেই বিষাক্ত অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ওই পোস্টে মণিকা নিজেকে 'নারীবাদী' বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, 'আসলে নারীবাদ আমার সঙ্গে মানায়। কারণ, আমি আদর্শে বিশ্বাসী এবং নারীবাদের অর্থ হল, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন। সেটা একে অপরের প্রতি থাকতে হবে। ক্রীতদাসের মতো কোনও আচরণ নয়।...'
'...কোনও মেয়েকেই তার মনের কথা বলতে বাধা দেওয়া নয়। এমনকী, বাড়ির পরিচারিকা, নিরাপত্তারক্ষী, রিকশাওয়ালা, একটি ছোট্ট শিশুও সম্মানজনক আচরণ পাওয়ার যোগ্য।...'
'...একবার আমার সঙ্গে কিছু লোক এই বলে তর্ক জুড়ে দিয়েছিল যে - সম্মান অর্জন করতে হয় - উফফ! কী অসম্মান না? আমি এটা বিশ্বাস করি না। প্রত্যেককে, সকলকেই সম্মান করা উচিত। যদি সেটা না করা হয়, তাহলে তুমিও সম্মান পাবে না। হয়তো সেই কারণেই আমরা ভারতে অপরিচিতদেরও সম্বোধন করার সময় - আপনি, ভাইয়া, দিদি - বলে ডাকি! তাই না?'
সূত্রের দাবি, মণিকার এই পোস্টের বয়ান অত্যন্ত প্রাপ্তমনস্ক হলেও সোশাল মিডিয়ায় তাঁর সঙ্গে পুনীতের ঝগড়ার যে ১৫ মিনিটের একটি অডিয়ো রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে, সেখানে তাঁদের মধ্য়ে টাকা এবং ব্যবসার ভাগ নিয়ে তুমুল অশান্তি করতে শোনা গিয়েছে।
দাবি অনুসারে, সেই রেকর্ডিংয়ে মণিকাকে তাঁর স্বামীর উদ্দেশে প্রশ্ন করতে শোনা গিয়েছে, 'কেন রাত ৩টের সময় তুমি আমাকে ফোন করেছ? তুমি শুধু আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিব্রত করছ। আমরা তোমার জন্য কত কিছু করেছি!'
জবাবে পুনীতকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'এসবের এখন আর কোনও অর্থ নেই। তুমি শুধু বলো, তুমি কী চাও!'
এদিকে, পুনীতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের ছেলের মৃত্যুর জন্য মণিকা ও তাঁর পরিবারই দায়ী। তাঁরা এই ঘটনায় সুবিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন।