বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > সীমান্তবর্তী পঞ্জাবে এবার পাঁচমুখী লড়াই! সাপ-লুডোর খেলায় শেষ হাসি হাসবে কে?

সীমান্তবর্তী পঞ্জাবে এবার পাঁচমুখী লড়াই! সাপ-লুডোর খেলায় শেষ হাসি হাসবে কে?

পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিত্ সিং চান্নি (ছবি সৌজন্যে পিটিআই) (PTI)

সীমান্তবর্তী এই রাজ্যের রাজনীতিতে গত কয়েকমাসে এসেছে একাধিক মোড়। পুরোনো সম্পর্ক ভেঙেছে। গড়েছে নতুন বন্ধুত্ব।

গত সাত দশক ধরে পঞ্জাব দুই মুখী লড়াই দেখে এসেছে। তবে স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে সাত দশক পর প্রথমবার পঞ্জাবে হবে পাঁচমুখী লড়াই! সীমান্তবর্তী এই রাজ্যের রাজনীতিতে গত কয়েকমাসে এসেছে একাধিক মোড়। পুরোনো সম্পর্ক ভেঙেছে। গড়েছে নতুন বন্ধুত্ব। আর এই সম্পর্কের ভাঙন গড়নের ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্জাবের ২.১ কোটি ভোটারের সামনে ইভিএমে থাকবে একাধিক বিকল্প।

গত প্রায় একবছর ধরে পঞ্জাবের রাজনীতির সবথেকে বড় ইস্যু ছিল কৃষি আইন ও কৃষক আন্দোলন। এই আবহে বিজেপির জনপ্রিয়তা কমেছে এই রাজ্যে। শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গে বিজেপির জোট ভেঙেছএ এই কৃষক আন্দোলনের জেরেই। আবার রাজ্যে সংযুক্ত সমাজ মোর্চাও গড়ে উঠেছে এই কৃষক আন্দোলনকে ঘিরেই। অপরদিকে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কিছুটা দুর্বল হয়েছে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের বিদায় ও অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে। বিজেপি আবার জোট গড়েছে ক্যাপ্টেনের পঞ্জাব লোক কংগ্রেসের সাথে। এদিকে আম আদমি পার্টিও এই রাজ্যে ধীরে ধীরে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক দশক ধরে পঞ্জাববাসী কংগ্রেস বনাম অকালির লড়াই দেশে এসেছে রাজ্যে। তবে এই রাজ্যে ভোট যুদ্ধে নতুন সব দলের আগমনে সমীকরণ বদলে গিয়েছে পুরোপুরি। কৃষক আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা সংযুক্ত সমাজ মোর্চা পঞ্জাবের ৫৫টি গ্রামীণ আসনে প্রভাব ফেলতে পারে। কংগ্রেস বা অকালির ভোট কেটে এই মোর্চা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’। এদিকে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব এই রাজ্যের রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

একবছর আগে যখন কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন খুব কম লোকই হয়ত ভেবেছিল যে পঞ্জাবে কংগ্রেসের এই দুর্দশা হবে। তবে নভজ্যোত সিং সিধু পঞ্জাবে কংগ্রেসের সভাপতি হতেই সব বদলে যায়। মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের সঙ্গে সিধুর সম্পর্কের প্রভাব পড়ে দলের উপর। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্ব ও পরে দল ছাড়েন ক্যাপ্টেন। এরপর চরণজিত্ সিং চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় কংগ্রেসের তরফে। তবে সিধুর ক্ষোভ তাতেও যায়নি। বারংবার নিজের দলের সরকারের বিরুদ্ধেই মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতিকে।

এদিকে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে শিরোমণি অকালি দল এবার হাত ধরেছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির। দলিত ভোটারদের সঙ্গ পেতেই এই চাল চেলেছিল শিরোমণি অকালি দল। তবে কংগ্রেস চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করে দলিত ভোটারদের কাছে টানার ছক কষে। উল্লেখ্য, চান্নি পঞ্জাবের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী। তবে নির্বাচনে জিতলে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে দলের মধ্যেই দ্বন্দ্ব চরমে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই চান্নি বনাম সিধুর দ্বন্দ্ব দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শিরোমণি অকালি দল বিদত দশকে টানা দুইবার পঞ্জাবে নির্বাচন জিতলেও ২০১৭ সালে তারা আম আদমি পার্টির থেকেও পিছিয়ে যায়। এদিকে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বিএসপির সঙ্গে হাত মেলালেও সেই সমীকরণ কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে সন্দিহান দলের একাংশই। তবে মহিলা ভোটারদের মন জয় করতে সচেষ্ট হয়েছে অকালি। এর জন্য বাংলার মতো মহিলাদের মাসিক ১০০০ টাকা ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অকালি। পাশাপাশি শিখদের ধর্মের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তার প্রতিফলন ভোটবাক্সে করাতে চায় অকালি।

এদিকে আম আদমি পার্টি পঞ্জাবে ক্রমেই নিজেদের জমি শক্ত করেছে। আম আদমি পার্টি পঞ্জাববাসীকে এমন এক নতুনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে যা দেখিয়ে দিল্লিতে তারা সফল। চণ্ডীগর পৌর নির্বাচনেও আম আদমি পার্টি ৩৫টির মধ্যে ১৪টিতে জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। আপ নেতৃত্বের বক্তব্য, চণ্ডীগড় শুধু ট্রেলার, আসল সিনেমা দেখাবে পঞ্জাব। এদিকে বিজেপি-পঞ্জাব লোক কংগ্রেস শহুরে হিন্দু ভোটের উপর ফোকাস করেছে। তবে ক্যাপ্টেনের নতুন দল কতটা কী করতে পারবে, তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কেউই কিছউ বলতে পারছে না। পুরোনো দলের প্রতি বিদ্বেষ থেকে নির্বাচনী ময়দানে নেমে বিজেপির হাত ধরা ক্যাপ্টেন অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। কতটকটা ক্যাপ্টেনের সঙ্গে জোট গড়তেই বিজেপি কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছিল বলে মত অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরই। সীমান্তবর্তী পঞ্জাবে ক্যাপ্টেন-বিজেপির মূল ইস্যু হবে সীমান্তবর্তী সুরক্ষা, অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার।  এই আবেহ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিনে এক অভিনব লড়াই দেখবে পঞ্জাব।

 

 

বন্ধ করুন