লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর দাবি নস্যাৎ করে দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। তাঁর বক্তব্য, রাহুল দাবি করেছেন - ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য আমন্ত্রণপত্র আদায় করে নেওয়া যায়, তার জন্যই নাকি গত ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন এস জয়শংকর। কিন্তু, রাহুলের এই দাবি সম্পূর্ণ ভুয়ো ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী।
উলটে রাহুলকে কাঠগড়ায় তুলে জয়শংকরের বক্তব্য হল, বিরোধী দলনেতা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যাভাষণ এবং মিথ্যাপ্রচার করছেন। তাঁর গত ডিসেম্বর মাসের মার্কিন সফর নিয়ে রাহুল গান্ধী বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলেও সোমবার অভিযোগ করেন এস জয়শংকর।
তিনি বলেন, '২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি যে মার্কিন সফর করেছিলাম, তা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্য়া কথা বলছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। আমি তৎকালীন বাইডেন প্রশাসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং এনএসএ-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। এছাড়াও, আমাদের কনস্যুল জেনারেলের অনুষ্ঠানেও আমি যোগ দিয়েছিলাম। আমি যখন সেখানে ছিলাম, সেই সময়, পরবর্তীতে যিনি এনএসএ-র দায়িত্ব নিতে চলেছেন, তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।'
এদিন রাহুল গান্ধীর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বিরোধী দলনেতার দাবির পালটা জবাব দেন এস জয়শংকর।
তিনি এই বিষয়ে আরও জানান, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে কোনও আলোচনাই কখনও করা হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন না, সেটা তো সাধারণ জ্ঞানের মধ্য়ে পড়ে। বস্তুত, ভারত সাধারণত বিশেষ প্রতিনিধিদের দ্বারাই প্রতিনিধিত্ব পেশ করে। হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই রাহুল গান্ধী এই মিথ্য়া ভাষণ করেছেন। কিন্তু, ওঁরা বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন।'
রাহুল গান্ধী সংসদে কী বলেছেন?
সোমবার লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রক্রিয়া চলাকালীন রাহুল তাঁর ভাষণে দাবি করেন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর 'একাধিকবার' আমেরিকায় গিয়েছিলেন। যাতে ট্রাম্পের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেই অনুরোধ মার্কিন প্রশাসনকে জানাতে।
রাহুলের কথায়, ‘আমরা যখন আমেরিকার সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা আমাদের বিদেশমন্ত্রীকে একাধিকবার সেখানে পাঠাই না, যাতে তিনি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি নিমন্ত্রণ আদায় করে আনতে পারেন।’
এদিন তাঁর এই ভাষণে ভারতে পণ্য উৎপাদন ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের বিষয়েও জোর দেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, 'কারণ, আমাদের যদি উৎপাদন ব্যবস্থা থাকত এবং আমরা যদি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতাম, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখানে এসেই প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতেন।'
রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানান সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তিনি বলেন, 'বিরোধী দলনেতা কখনই এই ধরনের ভিত্তিহীন গুরুতর মন্তব্য করতে পারেন না। এর সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। তিনি তথ্য যাচাই না করেই এই মন্তব্য করছেন। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।'
এরপর এ নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা যায়, 'আপনার মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি...!'
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই অনুষ্ঠানে জয়শংকর উপস্থিত ছিলেন। এবং তারও আগে গত বছরের ২৪ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ছ'দিনের মার্কিন সফরে গিয়েছিলেন তিনি।