পলিটিকাল কনসালটেন্সি আর করবেন না, পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের দিনই ঘোষণা করে দিয়েছেন নির্বাচন কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ কী, সেটা নিয়ে কিছু জানাননি তিনি। এরমধ্যে দফায় দফায় দেখা করেছেন শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। মঙ্গলবার দেখা করেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে। সেখানে সোনিয়াও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকেই তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন প্রাক্তন সভাপতি রাহুল।
হিন্দুস্তান টাইমস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কীভাবে ন্যুব্জ কংগ্রেসকে ফের চাঙ্গা করা যায়, বৈঠকে সেই নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এই প্রথমবার এই ইস্যুতে বৈঠক হল না। এর আগে মে মাসে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের একপ্রস্ত কথা হয়। তারপর দফায় দফায় অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রশান্ত। এবার ফের কথা হল গান্ধী পরিবারের সঙ্গে। বারবারই প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা এই বৈঠকে ঘুরেফিরে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। সরকারি ভাবে অবশ্য কংগ্রেস এই নিয়ে কিছু বলেনি। পুরোটাই জল্পনা বলে কৌশলী উত্তর দিয়েছেন প্রশান্ত। তবে দুইজন সূত্রের মারফত পাকা কথা জানা গিয়েছে যে এই নিয়ে আলোচনা চলছে।
সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রশান্ত কিশোরকে বলেন যে আপনি দলকে সাহায্য করতে চাইলে দলে যোগ দিন। তবে প্রশান্ত কিশোরের একাধিক শর্ত আছে। তিনি পুরোপুরি দলের খোলনলচে বদলে ফেলতে চান। নতুন সংসদীয় বোর্ড সৃষ্টির প্রস্তাবও দিয়েছেন এই ইলেকশন স্ট্র্যাটেজিস্ট।
প্রাথমিক ভাবে জল্পনা হচ্ছিল যে প্রশান্ত কিশোর হয়তো কংগ্রেসের পঞ্জাব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। এছাড়াও আগামী বছরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে আলোচনা মূলত হয় কংগ্রেসকে চাঙ্গা করা নিয়ে। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রস্তাব প্রশান্তের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। প্রশান্ত যদি কংগ্রেসে আসেন, তাহলে তাঁর সংগঠন Indian Political Action Committee (I-PAC)-ও যে বড় ভূমিকা পালন করবে সেটা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবির পর প্রশান্ত কিশোরের সাহায্য নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থী বাছাই থেকে নির্বাচনী রণকৌশল, প্রায় প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন এই বিহারপুত্র। চূড়ান্ত ফলাফল সবারই জানা। তারপর থেকেই প্রশান্ত কিশোরের জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। তিনি বাস্তবে যদি কংগ্রেসে যোগ দেন, সেটা পরপর দুটি লোকসভা ভোটে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া দলকে অক্সিজেন জোগাবে তা বলাই বাহুল্য।
তবে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কংগ্রেসের অতীতের অভিজ্ঞতা সুখের হয়নি। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে তিনি দলের সঙ্গে কাজ করেন। কিন্তু নিজের মতো করে তিনি রণকৌশল তৈরি করতে পারেননি বলে ঘনিষ্ঠ মহলে অভিযোগ করেন। সপার সঙ্গে জোট করেও ভরাডুবি হয়ে কংগ্রেসের। পঞ্জাবে যদিও অমরিন্দর সিংকে সাহায্য করেছেন কিশোর।
এর আগে সংযুক্ত জনতা দলের হয় সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু নীতিশ কুমারের সঙ্গে মতাদর্শগত অমিলের জন্য দল ছাড়েন। সেখানে তিনি কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে গত প্রায় দুই বছর ধরে প্রশান্ত মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেখানে যদি প্রশান্ত কংগ্রেসে যোগ দেন, মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যের ক্ষেত্রে সেটি সহায় হয় না অন্তরায়, সেটাও দেখার।