দেশের নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে আজ লোকসভা কক্ষে সেঙ্গল বা রাজদণ্ড প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে কংগ্রেস সহ ২০টি রাজনৈতিক দল আজকের এই অনুষ্ঠান বয়কট করে। এই আবহে আজকের অনুষ্ঠানকে কটাক্ষ করে টুইট করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সম্প্রতি লোকসভার সদস্যপদ হারানো রাহুল আজ টুইট বার্তায় লেখেন, ‘সংসদ জনগণের আওয়াজ তোলার জায়গা। তবে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে রাজ্যাভিষেক মনে করছেন।’
আজ নয়া সংসদ ভবনে 'স্বাধীনতার প্রতীক' সেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এতদিন প্রয়াগরাজের জাদুঘরে রাখা ছিল এই সোনার রাজদণ্ড। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, তখন স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে এই সেঙ্গল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহলরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন। এই সোনার রাজদণ্ডটি এতদিন রাখা ছিল এলাহাবাদ জাদুঘরে। তবে আজ এই রাজদণ্ডটি নতুন সংসদভবনে প্রতিষ্ঠিত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী মোদী নতুন সংসদ ভবনে এই সেঙ্গল প্রতিষ্ঠিত করেন, তখন তামিল সঙ্গীতজ্ঞরা 'নদস্বরম' নামক এক বাদ্যযন্ত্র বাজান। সেই সময় লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন তামিল শৈব মঠের পুরোহিতরা।
উল্লেখ্য, ‘সেঙ্গল’ শব্দটি তামিল শব্দ ‘সেম্মাই’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ন্যায়’। এর আগে দক্ষিণের চোলা রাজবংশে এভাবে রাজদণ্ড প্রদান করে রাজ্যাভিষেক হত বা ক্ষমতা হস্তান্তর হত। লর্ড মাউন্টব্যাটেন যখন নেহরুকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রকীক নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন এই সেঙ্গল হস্তান্তরের কথা ওঠে। নেহরু এই নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সি রাজাগোপালচারীকে। তখন এই তামিল ঐতিহ্যের কথা নেহরুকে জানিয়েছিলেন 'রাজাজি'। সেই প্রথা মেনেই পরে ভারতের ক্ষমতার ভার ব্রিটিশদের থেকে নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মাউন্টব্যাটেন। এই রাজদণ্ডটি তৈরি তৈরি করা হয়েছিল তামিলনাড়ুতেই। রাজাগোপালচারী এই সেঙ্গল তৈরির জন্য ‘তিরুভাদুথুরাই আথিনাম’ মঠের গুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে ভুমিদি বঙ্গারু চেট্টার নামক এক জহুরিকে এই সেঙ্গল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় মঠের তরফে। এই সেঙ্গলটি পাঁচ ফুট উঁচু। এর মাথায় আছে ন্যায়বিচারের প্রতীক তথা শিবের বাহন ‘নন্দী’। এদিকে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল যে 'স্বাধীনতার প্রতীক' সেঙ্গলকে 'যথাযথ সম্মান' দেয়নি কংগ্রেস। জাদুঘরে 'হাঁটার ছড়ি' হিসেবে রাখা ছিল এই রাজদণ্ড। এদিকে কংগ্রেস দাবি করে, এই সোনার দণ্ড ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক নয়। এর কোনও প্রমাণ নেই।
এদিকে আজ নয়া সংসদ ভবনে মোদী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অমৃত মহোৎসব পালন করছি আমরা। এই অমৃতকালে ভারতের জনগণ দেশের গণতন্ত্রকে এই সংসদ ভবন উপহার দিয়েছেন। স্বনির্ভর ভারতের উত্থানের সাক্ষী হবে এই নতুন সংসদ ভবন।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক বছরের বিদেশি শাসন আমাদের থেকে আমাদের গর্ব কেড়ে নিয়েছিল। আজ ভারত সেই ঔপনিবেশিক মানসিকতাকে পেছনে ফেলে এসেছে।’ তাঁর কথায়, 'পঞ্চায়েত ভবন থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত, আমাদের দেশ এবং এর জনগণের উন্নয়নই আমাদের অনুপ্রেরণা। আজ এই নতুন সংসদের নির্মাণে আমরা গর্বিত। আবার গত ৯ বছরে দেশের ৪ কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়ি এবং ১১ কোটি টয়লেট নির্মাণের কথা ভাবলেও আমি অপরিসীম তৃপ্তি পাই।' এদিকে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন প্রসঙ্গে মোদী আজ বলেন, 'নতুন সংসদের প্রয়োজন ছিল। আগামী সময়ে সাংসদদের সংখ্যা বাড়বে। সেটাও দেখতে হবে আমাদের। সেজন্য এখনই নতুন সংসদ তৈরি করতে হত।'