মৌসুমী বায়ু এবার যেন নিতান্তই বিমুখ বাংলাদেশের প্রতি। তাই তো বর্ষা এসে গেলেও এখনও সেভাবে দেখা মিলল না বৃষ্টির। প্রতিবছর যেখানে জুলাই মাসেই এই দেশে সব থেকে বৃষ্টি হয় সেখানে এই বছরের ছবিটা যেন অনেকটাই আলাদা ছিল। বিগত ৪২ বছরের মধ্যে ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সব থেকে কম পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। এবার কম বৃষ্টিপাতের রেকর্ড গড়ে ফেলল ভারতের এই পড়শি দেশ।
একদিকে যখন কম বৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে পারদ। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা। অত্যধিক গরম পড়েছে এবার বাংলাদেশে। যার ফলে কষ্ট বাড়ছে সাধারণ মানুষের। বৃষ্টির অভাবে ক্ষতি হচ্ছে চাষের। আমন ধান চাষ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা।
আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে যেখানে প্রতি বছর জুলাই মাসে গড়ে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে এবার মাত্র ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে গত ১৯৮০ সাল থেকে বৃষ্টিপাতের তথ্য সংরক্ষণ করে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর। আর তাদের হিসেব অনুযায়ী ২০২২ এর আগে কোনও বছর এত কম বৃষ্টি হয়নি। যেখানে ২০২০ সালে জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫৫৩ মিলিমিটার, এমনকী গত বছরেও যেখানে সংখ্যাটা ৪৭১ মিলিমিটার ছিল, সেখানে এবার চোখে পড়ার মতো বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে।
শুধু বৃষ্টি কম হলে তাও এক রকম ছিল। কিন্তু এবার বৃষ্টি কম হওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রাও বেড়েছে হুহু করে। গত ত্রিশ বছরের মধ্যে ২০২২ এর জুলাই মাসে সব থেকে বেশি গরম পড়েছিল বাংলাদেশে। গত ৩০ বছরে পড়শি দেশের জুলাই মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে এই বছর ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল জুলাই মাসে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সঙ্গে বেড়েছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। তাই দিনের পাশাপাশি রাতেও যথেষ্ট গরম অনুভূত হয়েছে। রাজশাহীতে সব থেকে বেশি গরম পড়েছিল এই বছর। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার প্রায় ২.৫ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা ছিল।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নানের মতে ২০২২ এর শুরু থেকেই বাংলাদেশের আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ঠিক তার পরের মাসেই চোখে পড়ার মতো কম বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এক দুই মাসেই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি তাপমাত্রা ছিল। একই সঙ্গে টানা ১৫ দিন বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও দাবদাহ বজায় ছিল। এটাও একটা রেকর্ড! বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত উষ্ণদিন দেখা যায়নি জুলাই মাসে। আবহাওয়ায় এরম গণ্ডগোল দেখা দিলে তা আখেরে কৃষিকাজের ক্ষতি করবে। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় আশঙ্কার দিন গুনছেন কৃষকরা।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই সামগ্রিকভাবে গোটা বাংলাদেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। জুলাই মাস থেকেই এই দেশে বৃষ্টি শুরু হয়। ভারী বর্ষণের ফলে কমে যায় তাপমাত্রা। কিন্তু এবার ঠিক তার বিপরীত হল। ভরা বর্ষাতেও চলল দাবদাহ।