ইটের গাঁথুনি যে নড়বড়ে, তা প্রথম থেকেই জানা ছিল। যতদিন গিয়েছে, ধীরে ধীরে পলেস্তারাও খসে পড়েছে। কিন্তু সেই ভাঙাচোরা বাড়ি যে ক্রমশ মেরামতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে বিষয়ে খুব সম্ভবত সপ্তাহদুয়েক আগেই দলের শীর্ষনেতাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন রাজস্থানের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট।
দু'তরফের নেতাদের থেকেই ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ জানতে পেরেছে, শনিবার জয়পুর ছেড়েছেন পাইলট এবং তাঁর সমর্থনে থাকা বিধায়করা। গিয়েছেন দিল্লিতে এবং বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেন। কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতাকে পাইলট জানান, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছে না। দু'জনের মধ্যে মতবিরোধ ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে অবহিত এক নেতা বলেন, ‘তিনি (পাইলট) অভিযোগের একটি দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেন।’ কিন্তু দিল্লিতে সেই বৈঠকের পর কংগ্রেসের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপালের সঙ্গেও দেখা করেন পাইলট।
যদিও গেহলট-পাইলটের দ্বন্দ্ব একেবারেই নতুন নয়। বরং সেই মতবিরোধ যে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, তা দলের অভ্যন্তরে কারোর অজানা নয়। ২০১৮ সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে যখন ২০০-র মধ্যে ১০৭ টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস, তখন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন পাইলট। বিজেপির প্রবল পরাক্রম সত্ত্বেও কংগ্রেস যে বাজিমাত করেছিল, তার মূল কাণ্ডারী ছিলেন পাইলট। কিন্তু মধ্যিখান থেকে আসরে ঢুকে পড়েন বর্ষীয়ান নেতা গেহলট। তার জেরে কংগ্রেসের চিরাচরিত নবীন-প্রবীণ আরও একবার প্রকাশ্যে চলে আসে। রাজস্থানের ক্ষমতা দখলের আবহের মধ্যে তা কংগ্রেসের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধতে থাকে। শেষপর্যন্ত মধ্যপন্থা অবলম্বন করে গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রী করেন রাহুল গান্ধী। উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন পাইলট।
কিন্তু সেই পদ যে আদতে নামভারী এবং কঙ্কালসার, তা স্পষ্ট করে দেন রাজ্যের এক নেতা। নাম গোপন রাখার শর্তে এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘উপ-মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত এবং রাজ্যের কোনও সিদ্ধান্তের আগে আলোচনা করা হয় না। অধিকাংশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারেন উনি (পাইলট)।’
তবে দিল্লির সেই বৈঠকের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। কারণ প্যাটেল এবং পাইলট দু'জনকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। কিন্তু মুখ খুলেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তারইমধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ টুইট করেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, ‘দলের জন্য চিন্তিত। আমাদের আস্তাবল থেকে ঘোড়া বেরিয়ে যাওয়ার পরই কি শুধু আমরা জেগে উঠব?’
সিব্বলের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাই। কিন্তু ‘ঘোড়া’-র ‘ক্ষোভ’ যে কংগ্রেস সরকারকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তা জলের মতো স্পষ্ট।