লিভ-ইন রিলেশনের উপর যাতে প্রশাসনিকস্তরে নজরদারি রাখা যায়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই ব্যবস্থা পাকা করার বার্তা দিল রাজস্থান হাইকোর্ট। আদালতের তরফে বলা হয়, এই বিষয়ে দুই সরকারই নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে পারে। এবং যত দিন না সেই আইন করা হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত সরকারের উচিত কোনও একটি কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ করা, যারা এই ধরনের সম্পর্কগুলি নথিভুক্ত করার কাজ করবে।
রাজস্থান হাইকোর্টের জয়পুর বেঞ্চের বিচারপতি অরূপ কুমার ধন্দ এই প্রসঙ্গে বলেন, 'দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্তৃপক্ষ কিংবা ট্রাইবিউন্যাল দ্বারা লিভ-ইন সম্পর্কগুলির নথিভুক্তি করানো দরকার। যা সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যত দিন না এই বিষয়ে কোনও আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, তত দিন প্রত্যেকটি জেলার জন্য একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হোক। যারা লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা দম্পতিদের মধ্যেকার এবং এই সম্পর্কের দ্বারা জন্ম নেওয়া শিশুদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্যাগুলি কাজ করতে পারবে। এই বিষয়ে একটি পোর্টালও চালু করা যেতে পারে।'
লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা দম্পতিদের নিরাপত্তার দাবিতে আদালতে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। সেই সংক্রান্ত মামলাগুলির প্রেক্ষিতেই বিচারপতি ধন্দ এই মন্তব্য করেন।
এই মামলা নিয়ে কথা বলার সময় উত্তরাখণ্ডের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন বিচারপতি ধন্দ। কারণ, সেখানে সম্প্রতি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, লিভ-ইন সম্পর্কগুলিকেও নথিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজস্থান আদালতের বিচারপতির বক্তব্য হল, এই ধরনের নথিভুক্তির সরকারি ব্যবস্থা করা হলে ওই দম্পতিদের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমবে। উল্লেখ্য, অধিকাংশ সময়েই লিভ-ইন সম্পর্ক পরিবারের সদস্যরা মানেন না এবং সম্পর্কে থাকা মানুষরা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা আক্রান্তও হন। আবার অনেক সময় তাঁদের উপর নীতিপুলিশিও করা হয়। সরকারি নথিভুক্তিকরণ এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিচারপতি।
এছাড়াও, এই ধরনের সম্পর্কে থাকা মহিলাদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে লিভ-ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রেশন করা জরুরি বলে মত বিচারপতির। আদালত মনে করছে, এই ধরনের সম্পর্ক থেকে সন্তানের জন্ম হলে তাকেও নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হবে আইন ও সরকারি নথিভুক্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে আদালতে বিচারপতি ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত ২১ নম্বর ধারার উল্লেখ করেন। যেখানে জীবনের বা বাঁচার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। যা আদতে সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
কিন্তু, একইসঙ্গে বিচারপতি সেইসব সামাজিক রীতিনীতি, প্রকাশ্য ভদ্রতা এবং আইনত দায়বদ্ধতাগুলির উপরেও গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা মূলত বৈবাহিক সম্পর্ককে ঘিরে আবর্তিত হয়।