রাজকোটের টিআরপি গেম জোনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় ২৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা নিয়েছে গুজরাট হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, এটি একটি 'ম্যানমেড বিপর্যয়'। আগামী ২৭ মে সোমবার গুজরাট হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হবে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, রাজ্যের গেম জোন নিয়ে নির্দেশিকা জারি করতে পারে হাইকোর্ট।
শনিবার সন্ধ্যায় গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে আসা লোকজনের ভিড়ে ঠাসা একটি গেম জোনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সী চার শিশুও রয়েছে।
বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণব ও বিচারপতি দেবন দেশাইয়ের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই এই ধরনের গেমিং জোন এবং বিনোদনমূলক পার্ক তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন। টেক অফের পরই ইঞ্জিনে পাখির ধাক্কা! স্পাইসজেট বিমানের আপৎকালীন অবতরণ দিল্লিতে
বেঞ্চ আহমেদাবাদ, ভদোদরা, সুরাট এবং রাজকোট পুর নিগমগুলির আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছে, আইনের কোন ধারার অধীনে এই ইউনিটগুলি স্থাপন এবং তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সহ সোমবার সোমবার আদালতের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে।
গুজরাট হাইকোর্ট রাজ্য সরকার এবং মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনগুলির জানতে চায়, এই জাতীয় বিনোদন পার্ক তৈরি লাইসেন্স এবং ফায়ার এনওসি দিয়েছিল কিনা। যা এই কর্পোরেশনগুলির এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছিল।
সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই এই বিনোদন পার্কগুলি তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদপত্রের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে হাইকোর্ট জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় অনুমতি, অনাপত্তি শংসাপত্র, ফায়ার এনওসি এবং নির্মাণের অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এড়াতে রাজকোটের টিআরপি গেম জোনে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন। গুজরাটের গেমিং জোনে ভয়াবহ আগুন, অন্তত ২০জনের মৃত্যু, আটকে পড়েছিল শিশুরা
শুধু রাজকোট নয়, আহমেদাবাদ শহরেও এই ধরনের গেম জোন তৈরি হয়েছে এবং এগুলি 'জননিরাপত্তার জন্য, বিশেষত নিষ্পাপ শিশুদের জন্য হুমকির'।
আদালত বলে, 'সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের অনুযায়ী এ ধরনের গেমিং জোন বা বিনোদনমূলক পার্কগুলি কোনও অনুমতি ছাড়াই তৈরি হয়েছে।
আদালত বলে, 'প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একটি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। যেখানে শিশুদের নিরীহ প্রাণহানি ঘটেছে এবং পরিবারগুলি তাদের ক্ষতিতে শোকাহত, হতবাক।
আদালত জানিয়েছে, রাজকোট গেম জোনে যেখানে আগুন লেগেছিল, সেখানে পেট্রোল, ফাইবার এবং ফাইবার গ্লাস শিটের মতো অত্যন্ত দাহ্য পদার্থের মজুত ছিল।
আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত মামলাটি সোমবার শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশনগুলির প্যানেল অ্যাডভোকেটদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোন আইনের বিধানের অধীনে কর্পোরেশনগুলি এই গেমিং জোন / বিনোদনমূলক সংস্থাগুলি স্থাপন বা অব্যাহত রাখতে সুযোগ দিয়েছে।
অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় জরুরি ভিত্তিতে শুনানির জন্য অমিত পাঞ্চালের আবেদনও মঞ্জুর করেছে বেঞ্চ।
পাঞ্চাল তাঁর নোটে দাবি করেছেন যে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড গুজরাট প্রাদেশিক পৌর কর্পোরেশন আইন, ১৯৪৯, গুজরাট ফায়ার প্রিভেনশন অ্যান্ড লাইফ সেফটি মেজার্স অ্যাক্ট, ২০১৩ এর অধীনে প্রণীত বিধি ও প্রবিধান এবং সুপ্রিম কোর্ট এবং গুজরাট হাইকোর্টের জারি করা নির্দেশাবলীর মেনে চলা হয়নি।
ঘটনার তদন্ত করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য গুজরাট সরকার গঠিত পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল শনিবার গভীর রাতে রাজকোটে পৌঁছে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে।
অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ তথা সিটের প্রধান সুভাষ ত্রিবেদী শনিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক। তিনি বলেন, দোষীদের খুঁজে বের করতে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এসিপি) বিনায়ক প্যাটেল জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে ২৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করে সিটি সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন এবং তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন তিনি।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, 'মৃতদেহগুলি এতটাই পুড়ে গেছে যে চেনা যাচ্ছে না এবং আমরা মৃতদেহ এবং তাদের দাবিদার স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি যাতে মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করা যেতে পারে। মৃতের সংখ্যা আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী মোদী শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সাথে উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারপিছু ৪ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।