দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং সামরিক আন্তঃকার্যক্ষমতা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। দুই দেশ মোট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে বৃহস্পতিবার। উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অস্ট্রেলিয়া সফরে আছেন। এদিকে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে কৌশলগত সমন্বয়ের বিষয়ে আস্থা প্রকাশ করেছে দুই দেশই। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে চিনকে মোকাবিলা করতে আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিকে আর কৌশলগত বিনিয়োগ করবে না। এর মাঝে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ক্যানবেরায় প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস গোয়েন্দা মুখোমুখি হয়েছিলেন গতকাল। সেই বৈঠকেই পারস্পরিক সাবমেরিন অনুসন্ধান ও উদ্ধার সহযোগিতা এবং জয়েন্ট স্টাফ ডায়ালগ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। উভয় দেশ এখন যৌথ সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা রোডম্যাপ এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা কাঠামো চূড়ান্ত করার জন্যও কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান শুল্ক বিরোধ এবং কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ভারত এখন অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপিন্সের মতো আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সরাসরি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের সম্প্রসারণবাদী অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন এই সব দেশ।
এদিকে ২০১৪ সালের পর এই প্রথম কোনও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি সফরে গেলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী গত ২৯ অগস্ট জাপানের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। এদিকে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকের পর অজি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্লেস বলেন যে চিন উভয় দেশের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা উদ্বেগ। তিনি উল্লেখ করেন যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বজায় রাখার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা জরুরি। তাঁরা নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা, বিমান চলাচলের নিরাপত্তা এবং বাধাহীন বাণিজ্যকে সমর্থন করেন এবং কোয়াড দেশগুলির মধ্যে সামুদ্রিক নজরদারি বৃদ্ধির কথা বলেন মার্লেস। আগামী মাসে মালাবার নৌ-মহড়ার প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করেন রাজনাথ এবং মার্লেস।
তিনি বলেন, 'আমরা প্রতিরক্ষা শিল্প, সাইবার নিরাপত্তা, সামুদ্রিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ সহ ভারত-অস্ট্রেলিয়া অংশীদারিত্বের পুরো রূপরেখা পর্যালোচনা করেছি। আমরা আমাদের সর্বাঙ্গীন কৌশলগত অংশীদারিত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।' এদিকে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত সারা বিশ্বতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে। ২০২০ সালে স্বাক্ষরিত মিলিটারি লজিস্টিক কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (এমএলএসএ) এর পরে, দুই দেশ এখন বিমান বাহিনীর মধ্যে এয়ার-টু-এয়ার রিফুয়েলিং চুক্তিও বাস্তবায়ন করেছে। এদিকে সিডনি থেকে ক্যানবেরা যাওয়ার পথে রাজনাথ সিংকে মাঝআকাশে এফ৩৫ যুদ্ধবিমানে জ্বালানী ভরার প্রদর্শনী দেখানো হয়েছিল।