জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার গ্রামে ঠিক কী ঘটেছে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চরম তৎপরতায় প্রশাসন। তথ্য বলছে, গত ৪৫ দিনে এক অজানা রোগের শিকার হয়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বহু নমুনা সংগ্রহ করে এই অসুস্থতার কারণ জানার চেষ্টা হয়েছে। রোগের খোঁজে আইসিএমআর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে শুরু করে ডিআরডিও সহ দেশের তাবড় প্রতিষ্ঠান নেমেছে ময়দানে। প্রশাসনের হাতেও বেশ কিছু তথ্য এসে পৌঁছেছে। এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে দিল্লি থেকে একটি টিম যাচ্ছে রাজৌরির ওই গ্রামে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ঘটনার মূল খোঁজার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনকে।
জম্মু ও কাশ্মীরের বুধাল গ্রামে গত ৪৫ দিনে ১৬ জনের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সেখানে এক অজানা রোগের শিকার হয়েছেন অনেকে বলে খবর। কী এই রোগের কারণ? তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট তথ্যের খোঁজ নেই। তবে উঠে আসছে ‘নিউরোটক্সিন’এর উল্লেখ। কী থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে বা মানুষ সেখানে অসুস্থ হচ্ছেন, তা নিয়ে রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশা। পুলিশ বলছে, তিনটি পরিবার, যাদের একটি বাড়ি থেকে অপর বাড়ির দূরত্ব ১.৫ কিলোমিটারের মধ্যে সেই বাড়িগুলিতেই এই রহস্যমৃত্যু ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেদিন একটি জমায়েতে খাবার খেয়ে অসুস্থ হন একই পরিবারের ৭ জন। মৃত্যু হয় ৫ জনের। পরের ঘটনা ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪। সেদিন অসুস্থ হন ৯ জন, মৃত্যু হয় ৩ জনের। তৃতীয় ঘটনা ১২ জানুয়ারি। ১০ জন মানুষ সেদিন অসুস্থ হন। সেদিনও জমায়েতের খাবার খেয়েছিলেন তাঁরা। ঘটনায় ৬ শিশু অসুস্থ হয়। ১০ বছরের এক শিশু সদ্য বুধবার রাতে মারা যায় হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায়।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন,' এই মৃত্যুর অব্যক্ত প্রকৃতি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। সরকার মূল কারণ উদঘাটন এবং আমাদের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত বিভাগকে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে এবং এই সমস্যা সমাধানে কোনও কসরত ছাড়া যাবে না।' এদিকে, বুধলা গ্রামে সফর করবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিত অন্তঃ-মন্ত্রক একটি টিম। সেই টিমে থাকবেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, কৃষি মন্ত্রণালয়, রাসায়নিক ও সার মন্ত্রক এবং পানি সম্পদ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা। এর আগে, স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন টিম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৩হাজার জনেরও বেশি বাসিন্দার ঘরে ঘরে সমীক্ষা চালিয়েছে এবং জল, খাবার এবং অন্যান্য উপকরণের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করেছে। এক অফিসার বলছেন,' ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সম্ভাব্য দূষক সহ সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ ফিরে এসেছে।' এদিকে, মৃতদের অটোপসি রিপোর্টে CSIR-IITR পেয়েছে নিউরোটক্সিনের উপস্থিতি। রহস্য ক্রমেই ঘনাচ্ছে। আপাতত যে সমস্ত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের বাকি সদস্যদের সেই জায়গা থেকে স্থানান্তরিত করে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বাড়ি বা সরকারি কোনও স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের সকলের দিকে নজর রাখছে প্রশাসন।