কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। এই অভিযোগ তোলে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তার পাল্টা জবাব হিসাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাংলাকেই আক্রমণ করে বসেছিলেন। যার জবাব দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার ভরা রাজ্যসভায় নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে তুমুল বাক–বিতণ্ডায় জড়ালেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। বাংলাকে নিয়ে যখন উত্তর দিচ্ছিলেন নির্মলা তখন প্রতিবাদ করে ওঠেন ডেরেক। সুর সপ্তমে তুলে জানান, কোনও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক মন্তব্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী করতে পারেন না। তখনই দু’জনের মধ্যে বাদানুবাদে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি যে প্রতিকূল স্তরে যাচ্ছে সেটা তখন সভায় ভালই বুঝতে পারছেন সকলে। এই আবহে নির্মলাকে থামিয়ে দিয়ে ডেরেকের সোচ্চার হওয়া বেশ চাপেই ফেলে দেয় পদ্ম সাংসদদের। তখন ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নামেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নড্ডা। তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, ‘রাজ্য সরকার সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলা হয়নি। আপনারা কি রাজ্যসভাকে মাছের বাজার মনে করেছেন?’ রাজ্যসভায় জবাবি ভাষণ দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সময় সমস্ত রাজ্যের কথাই বলছিলেন তিনি। এরপর যখন বাংলার প্রসঙ্গ আসে তখন বঞ্চনার অভিযোগে সরব হন সাংসদ সাকেত গোখলে–সহ বাংলার সাংসদরা। পাল্টা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন নির্মলা সীতারামন।
আরও পড়ুন: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে বাজেটে কোনও বরাদ্দ বাড়েনি, অপরিবর্তিত ঘোষণা চন্দ্রিমার
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সাকেত গোখলের প্রশ্ন উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, কেন বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি? কেন বাজেটের তালিকায় রাখা হয়নি কোনও পর্যটনকেন্দ্রকে? আমি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের কথা উল্লেখ করতে চাই। বহু সদস্যই ভাবছেন বাংলাকে কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। গজেন্দ্র বলেছেন, আমরা চারবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছি। লিখিত দিয়েছি। কিন্তু আমাদের সব চেষ্টা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কোনও প্রস্তাব পাঠায়নি।’ এই কথা শুনে প্রতিবাদ করেন ডেরেক। তখন নির্মলাকে থামিয়ে তাঁকে বলার সুযোগ দেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং।
এইবার সুযোগ পেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে ধুয়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর বক্তব্য, ‘নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও বিষয়ে রাজ্যসভার কোনও সদস্য যদি অপর সদস্যকে প্রশ্ন করতে চান, তাঁকে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে হয়। এটাই নিয়ম। আগে থেকে নোটিশ না দিয়ে সভায় কোনও রাজ্য সরকার সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করা যায় না। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, বাংলার ১০০ দিনের কাজের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা কোথায়?’ তখনই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নামেন জেপি নড্ডা। তাঁর কথায়, ‘কোনও রাজ্য সরকারকে অসম্মানজনক কিছু বলা হয়নি। অযথা রাজনীতি করা হচ্ছে। আপনারা একটা করে বিষয় তোলেন আর এমন ভাব করেন যেন মনে হয় রাজ্যের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে।’ এই কথা শুনে সোচ্চার হন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদরা। তখনই জেপি নড্ডা বলে ওঠেন, ‘এটা কি মাছের বাজার নাকি? কথা শোনার মতো ভদ্রতাও নেই আপনাদের।’