বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-এর সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে গিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার আগে যথেষ্ট সচেতন ও সতর্ক সরকার পক্ষ। তাদের তরফে যে উচ্চ পর্যায়ের প্য়ানেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, সেই কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে সাতটি দেশের নির্বাচনী পদ্ধতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। এই সাতটি দেশের মধ্যে অন্যতম - দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন ও বেলজিয়াম।
এছাড়াও, আরও যে চারটি রাষ্ট্রে একসঙ্গে সারাদেশে নির্বাচন হয়, সেগুলি হল - জার্মানি, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্স।
উল্লেখ্য, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন সংশ্লিষ্ট প্যানেল গত মার্চ মাসেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে নিজেদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব, প্রাথমিকভাবে লোকসভা ও সবক'টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করা হোক। তার ১০০ দিনের মধ্যে সমস্ত আঞ্চলিক নির্বাচন সেরে ফেলা হোক।
সূত্রের দাবি, এক দেশ, এক নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণ করার সময় সেই সমস্ত দেশের নির্বাচন প্রণালীও খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, যেখানে ইতিমধ্যেই সারা দেশে একসঙ্গে নির্বাচন করা হয়। আন্তর্জাতিক মাপকাঠি মেনে যাতে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে নয়া নির্বাচনী প্রণালী কার্যকর করা যায়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ।
দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন পদ্ধতি
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্বাচনের সময় ভোটদাতারা একইসঙ্গে দেশের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং প্রাদেশিক আইনসভার জন্য ভোটদান করেন। কিন্তু, সেখানে পুরনির্বাচনকে প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন থেকে পৃথক রাখা হয়েছে। পাঁচবছর অন্তর পুরসভার নির্বাচন আলাদাভাবে করা হয়। আগামী ২৯ মে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফের ভোট হবে। যার মাধ্যমে দেশবাসী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং একইসঙ্গে প্রাদেশিক সরকারের সদস্যদের নির্বাচন করবে।'
সুইডেনের সরকার কীভাবে তাদের নির্বাচন করায়?
এই প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'সেদেশে প্রতি চারবছর অন্তর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় রবিবার একটি নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে একইসঙ্গে রিক্সদ্যাগ (কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট), কাউন্টি কাউন্সিল এবং মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের ভোট হয়। অন্যদিকে, প্রতি পাঁচবছর অন্তর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় রবিবার মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচন করা হয়।'
জার্মান মডেল
সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় প্যানেলের অন্যতম সদস্য সুভাষ সি কাশ্যপ এক্ষেত্রে জার্মানির নির্বাচনী মডেল অনুসরণ করার পক্ষপাতী। যেখানে বুন্ডেনস্ট্যাগ দ্বারা চ্যান্সেলরের নিয়োগ এবং অনাস্থার গঠনমূলক ভোট নীতি মেনে চলা হয়।
জাপানের নির্বাচনী পদ্ধতি
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 'জাপানে প্রথমেই জাতীয়স্তরে প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচন করা হয়। তারপর তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি দেন জাপানের সম্রাট।' সুভাষ সি কাশ্যপ মনে করেন জাপানের এই মডেলও ভারত অনুসরণ করতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার ভোটাভুটি
২০১৯ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়াও এক দেশ, এক নির্বাচন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। সেখানে একই দিনে একসঙ্গে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক আইনসভার সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়।