প্রিয়াঙ্কা দেববর্মন
বাংলাদেশে ভারত-বাংলাদেশ যাত্রীবাহী বাসে হামলার অভিযোগ। এবার সেই ঘটনার জেরে কড়া প্রতিক্রিয়া ত্রিপুরার মুখ্য়মন্ত্রীর।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা বলেছেন, শনিবার বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোডে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বাসে যে হামলার কথা বলা হচ্ছে এবং দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত সংশোধন করা উচিত, অন্যথায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ভাবাই যায় না। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা যদি নিজেদের সংশোধন করে নেয় তাহলে তো ভালোই, নইলে আরো অনেক ঘটনা আছে বলে শুনেছি। আমি সেই তথ্যগুলি যাচাই করার পরে মন্তব্য করব, তবে সেখানে যা চলছে তা ভাল নয়, ’ জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্য়মন্ত্রী।
সেখানকার (বাংলাদেশ) সংখ্যালঘুদের ওপর তাদের নৃশংসতা বিশ্ববাসী দেখছে। আমি আশা করি এই ঘটনাগুলি আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা নিশ্চয়ই সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ত্রিপুরা যেহেতু তিন দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত, তাই আমরা বিএসএফ এবং ডিজিপির সঙ্গে কড়া নজরদারি নিয়ে আলোচনা করেছি।
ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, ত্রিপুরা থেকে কলকাতাগামী আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বাস শ্যামলীর ওপর হামলা চালানো হয়।
ত্রিপুরা থেকে কলকাতাগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোডে হামলা চালানো হয়। ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসের যাত্রীরা, বাসটি বিশ্ব রোডের পাশ দিয়ে চলছিল। হঠাৎ একটি পণ্যবাহী ট্রাক ইচ্ছাকৃতভাবে বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। এ সময় একটি অটো বাসের সামনে এসে তার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের হুমকি দিতে শুরু করে। তাদের সামনে ভারতবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয় এবং তাদের হুমকি দেওয়া হয়। এতে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশিদের চিকিৎসার সুবিধা দেবে না।
সেখানে ভারতীয়দের ওপর সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বাংলাদেশি রোগীদের সেবাদানকারী ডেস্কটি বন্ধ করে দিয়েছি।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী সাহা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
‘আমরা ডাক্তার। রোগীরাই আমাদের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার। আমাদের এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এগুলো তাদের ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে।’
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে কলকাতাগামী বাসের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ উঠেছিল যে ইচ্ছা করে কলকাতাগামী বাসে ধাক্কা মেরেছে একটি ট্রাক। শুধু তাই নয়, আতঙ্কিত বাসযাত্রীদের ঘিরে ধরে ভারত-বিরোধী স্লোগান তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ত্রিপুরার পরিবহণমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে আপাতত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য না করা হলেও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন যে বাংলাদেশ যদি শুধরে যায় তো ভালো, নাহলে ফল ভুগতে হবে। যদিও বাংলাদেশের কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাসে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা মারা হয়নি। একটা নেহাত দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাতে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কোনও যাত্রী আহত হননি। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও আপাতত কিছু জানানো হয়নি।