ক্ষিপ্র দৃষ্টি। শরীরে হাল্কা বাদামি রঙের উপর সাদা কালো ছোপ ছোপ দাগ। আবার সব চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, ঘাড়ের পিছনের অংশে লাল রঙের গোলাকৃতি টিপের মতো চিহ্ন। এক শতাব্দীর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে প্রথম এই ধরনের সাপের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, ১০০ বছরেরও বেশি সময় মধ্যে এই ধরনের সাপ দেখা যায়নি। অসমে এমনই বিরল প্রজাতির সাপ আবিষ্কার করেছে ভারত, যুক্তরাজ্য ও আমেরিকার বিজ্ঞানীদের একটি দল।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত পশু শ্রেণি বিজ্ঞানীদের জার্নাল ‘জুটক্সারো’র সংস্করণে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া দেরাদুন, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের বিজ্ঞানীদের একটি দল অসম থেকে এই বিরল প্রজাতির সাপটি আবিষ্কার করেছেন।
দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া ২৭টি প্রজাতির মধ্যে র্যাবডোফিস গোত্রের এই নয়া প্রজাতির সাপটির নামকরণ করা হয়েছে ‘র্যাবডোফিস বিন্দি’। কারণ সাপটির ঘাড়ে লাল রঙের টিপের মতো দাগ স্পষ্ট রয়েছে, যা অন্য কোনও প্রজাতির সাপের মধ্যে নেই।
এই সাপ আবিষ্কারক দলের সঙ্গে যুক্ত ডব্লুআইআইয়ের অভিজিৎ দাস বলেন, ‘ ভারতীয় মহিলাদের কপালে লাল রঙের টিপ তাঁদের সৌন্দর্য়ের প্রতীক। এই সাপটির ঘাড়েও লাল রঙের টিপের মতো দাগ থাকায়, এই ধরনের নামকরণ করা হয়েছে।’
অভিজিতবাবু আরও বলেন, ‘ এই সাপের প্রজাতির খোঁজ পাওয়ার পর গবেষণা করে শ্রেণী বিভক্ত করতেই ১৪ বছর সময় লেগে গিয়েছে। কারণ, এই নতুন প্রজাতির সাপটিকে বিভিন্ন দেশে পাওয়া অন্যান্য প্রজাতির সাপের সঙ্গে তুলনা করতে হয়েছিল। তাছাড়া বিশ্বের অনেক নমুনা গবেষণাও করতে হয়। তাছাড়া এই প্রজাতির জেনেটিক বিশ্লেষণ করতেও অনেক সময় লেগেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ এই নতুন প্রজাতির সাপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার। এই সাপটি অনেকটা উত্তর-পূর্বে হিমালয়ে আবিষ্কার হওয়া লাল ঘাড়ের কিলব্যাকের মতো দেখতে।
তবে এই হিমালয়ের লাল ঘাড়ের কিলব্যাক সাপ সমতল থেকে শুধুমাত্র ৬০০ মিটার উচ্চতায় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এই নতুন প্রজাতির সাপটি চিরহরিৎ বনাঞ্চলের নিম্নভূমিতে বাস করে বলে মনে হয়।’
অভিজিতবাবু বলেন, ‘ যদিও বেশিরভাগ প্রজাতির সাপ অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরামের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি থেকে আবিষ্কার হয়েছে। তবে অসম থেকে ‘র্যাবডোফিস বিন্দি’র আবিষ্কারে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ধরনের আরও অনাবিষ্কৃত প্রজাতি অসমের বনাঞ্চলে থাকতে পারে।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে অসমের কাছাড় জেলার বড়াইল হিল রেঞ্জ ও তার আশেপাশের অঞ্চলে সমীক্ষা চালানোর সময় অভিজিৎবাবুই প্রথমে এই প্রজাতির সাপের খোঁজ পান। পরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ মিটারের উচ্চতায় পাওয়া আরও ১০টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপ সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়।