বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ধুঁকতে থাকা কোচিং সংস্থা বাইজুসের প্রতিষ্ঠাতা তথা কর্ণধার বাইজু রবীন্দ্রণের। এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল - তিনি নাকি মার্কিনিদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া অর্থ ব্যবহার করে গোপনে একটি সফটওয়্যার সংস্থা কেনার চেষ্টা করেন। যা একটি মার্কিন ট্রাস্টি অধিগ্রহণ করে নিয়েছিল।
আদালত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রবীন্দ্রণের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এনেছে ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন। তাদের দাবি, তাঁর দেউলিয়া হয়ে যাওয়া স্টার্টআপ সংস্থা বাইজুসের নিয়ন্ত্রণ ফের একবার নিজের হাতে ফিরে পেতেই এই অপচেষ্টা করেন রবীন্দ্রণ।
প্রসঙ্গত, বাইজুসের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ভারতে নয়, একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আইনি সমস্যা ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, রবীন্দ্রণ যে লক্ষ-লক্ষ ডলার ধার করে, সেই অর্থ নিয়ে বসে আছেন, সেকথা ওসিআই লিমিটেড নামে ইউকে-এর একটি সংস্থার কাছে গোপন করেছিলেন। বদলে, তিনি জানিয়েছিলেন, সমস্ত অর্থ ব্যয় হয়ে গিয়েছে।
এর পরের ঘটনা আরও চাঞ্চল্যকর। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে - রবীন্দ্রণ উইলিয়াম আর হেয়লার নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করেন। যিনি নেব্রাস্কার একজন ব্যবসায়ী হলেও আগে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করতেন।
অভিযোগ, হেয়লারের মাধ্যমে রবীন্দ্রণ সেই মার্কিন ঋণদাতাদের কেনার চেষ্টা করেছিলেন, যাঁদের বাইজুসের কাছে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পাওনা রয়েছে।
এই হেয়লারকে উদ্ধৃত করেই সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, রবীন্দ্রণ রোজ লেক ইঙ্ক নামে একটি সংস্থাকে ১ কোটি ১২ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। যে কোম্পানি আদতে রবীন্দ্রণের নিজের হলেও, হেয়লার সেটি চালাতেন। যাতে সংশ্লিষ্ট ঋণদাতাদের তিনি বোঝাতে পারেন, তাঁর কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, রবীন্দ্রণ যে টাকা ওই সংস্থাকে দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তা তাঁকে ফেরতও দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ঋণ নেওয়া নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন রবীন্দ্রণ। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি কোনও বেআইনি কাজ করেননি। বদলে তিনি ঋণদাতাদের উপরেই যাবতীয় দায় চাপিয়ে ছিলেন।
রবীন্দ্রণের বক্তব্য ছিল, এই ঋণদাতারা যেকোনও বিপদগ্রস্ত সংস্থার কাছ অর্থ চুষে নিতে বিশেষ পারদর্শী। তাঁরা বাইজুসের বিরুদ্ধে নানা ধরনের আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন বলেও দাবি রবীন্দ্রণের। তিনি জানিয়েছিলেন, এই কারণেই ওই ঋণদাতাদের মোকাবিলা করতে তিনি প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে বাইজুসের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালত ও বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছেন ঋণদাতারা। তাঁদের সেই আইনি লড়াই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে।
ঋণদাতাদের অভিযোগ, রবীন্দ্রণ তাঁদের কাছ থেকে ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েও তা গোপন করেছিলেন। অথচ, সেই বিপুল অর্থ তাঁর ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।
এদিকে, ভারতেও বাইজুস তথা তার কর্ণধার রবীন্দ্রণের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। সম্প্রতি আদালতের তরফে পেশাদারদের নিয়োগ করা হয়। যাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে - ঋণদাতাদের অর্থ ফেরত দিতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলি থেকেই সেই অর্থ তুলতে হবে।