গভীর রাতে তরুণীর ঘরে ঢুকে তাঁর শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে গত রবিবারই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি ঘটে কলকাতার এন্টালি থানা এলাকায়। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম সন্তোষ লাল প্রসাদ।
তথ্য বলছে, সন্তোষ একা নন। তাঁর মতো একাধিক সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন, যাঁদের কার্যকলাপ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসনকে বিপাকে ফেলেছে!
বস্তুত, সন্তোষ হলেন সেই ১০ জন সিভিক ভলান্টিয়ারের মধ্যে দশম ব্যক্তি, যাঁদের বিরুদ্ধে গত আড়াই বছরের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাতে হয়েছে এবং সাসপেন্ড করতে হয়েছে।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে বাংলার পুলিশ প্রশাসনের মাথাব্যথা যে নতুন নয়, তার প্রমাণ রয়েছে ভূরি ভূরি। এই বিষয়টি নিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার তরফে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। যার তথ্যাবলী রীতিমতো চাঞ্চল্যকর।
যেমন - বেআইনি কাজ করে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাসিন্দা আরও এক সিভিক ভলান্টিয়ার।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, আইনের পরোয়া না করে বাড়ি থেকেই গ্যাস বেলুন ফোলানোর কারবার শুরু করেছিলেন তিনি। সেই গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রবল আক্রোশ ও হামলার মুখে পড়তে হয় ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কলকাতা পুলিশ হোক, কিংবা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ - দুই পক্ষকেই যন্ত্রণায় ফেলেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নানা 'কীর্তি'!
উল্লেখ্য, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সঞ্জয় রায়ও একজন সিভিক ভলান্টিয়ার।
যার জেরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত চিকিৎসা কেন্দ্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের সেখান থেকে অন্যত্র সরাতে হবে।
এ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে যে হলফনামা পেশ করা হয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট স্থানগুলি থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে, কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কেন্দ্রে এখনও সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁদের ডিউটি করছেন।
রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা যাতে আইন মেনে, মানবিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের সেই পাঠ পড়ানো হচ্ছে!
এক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের তরফেও ৪৫ দিনের একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আগে ঠিক হয়েছিল, নভেম্বর মাসেই সেই কর্মসূচি শুরু করা হবে। কিন্তু, উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যাওয়ায় সেই কর্মসূচি পিছিয়ে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওই কর্মসূচির আওতায় ২১ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের।
সংখ্যায় বেশি হওয়ায় একাধিক দলে ভাগ করে তাঁদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি দলে ১৬০ থেকে ২০০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার থাকবেন।
প্রসঙ্গত, সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যার মধ্যে রয়েছে - খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরি, মুক্তিপণ আদায় প্রভৃতি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর, ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশ নামক দু'টি বাহিনী তৈরি করে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার।
প্রাথমিকভাবে বলা হয়, এই দুই বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের কাজে সহায়তা করবেন। কিন্তু, পরবর্তীতে তাঁদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যা আজও অব্যাহত।