রাজ্যের যেকোনও উন্নয়নমূলক নির্মাণকাজে মুসলিমদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ চালু করার কথা ভাবছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন কর্ণাটক সরকার।
ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় মুসলিম ঠিকাদারদের জন্য ৪ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকাজের প্রকল্প-মূল্য সর্বাধিক ১ কোটি টাকা হতে পারে।
ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে কর্ণাটকের সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ৪৩ শতাংশ সংরক্ষণ চালু রয়েছে। যার মধ্যে ২৪ শতাংশ সংরক্ষণ বরাদ্দ রয়েছে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য।
বাকি ৪ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা লাভ করেন ক্যাটেগরি-১ স্তরের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী বা ওবিসি-রা। আরও ১৫ শতাংশ সংরক্ষণ বরাদ্দ রয়েছে ক্যাটেগরি-২এ ওবিসি-দের জন্য।
যদিও মুসলমানদের আলাদা করে ৪ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি এখনও পর্যন্ত আলোচনার স্তরেই রয়েছে, তবুও অনুমান করা হচ্ছে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সেই সংরক্ষণটি ক্যাটেগরি-২এ ওবিসি-র অধীনেই করা হবে।
সেক্ষেত্রে, সব মিলিয়ে সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের পরিমাণ বেড়ে হবে ৪৭ শতাংশ।
সরকারের ভাবনায় আপত্তি লিঙ্গায়েতদের:
সরকারের এই পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসতে নানা মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। ভোক্কালিগা এবং লিঙ্গায়েতরা সরকারের এই অবস্থানের বিরোধ করেছেন।
একইসঙ্গে, তাঁদের পক্ষ থেকে কর্ণাটক রাজ্য ঠিকাদার অ্য়াসোসিয়েশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে তারা রাজ্য সরকারকে এই পদক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার দাবি জানায়।
প্রসঙ্গত, মুসলমান ঠিকাদারদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ চালুর পাশাপাশি রাজ্য সরকার ভাবছে, আগামী দিনে সংরক্ষিতদের সরকারি প্রকল্পের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট ক্রমান্বয় ছাড়াই (ব়্যানডমভাবে) টেন্ডার দেওয়া হবে। সংরক্ষিত সকল গোষ্ঠীই যাতে ন্যায্য সুযোগ পায়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা বলে ডেকান হেরাল্ডের সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
আরও বলা হচ্ছে, সরকারি টেন্ডার বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সমান সুযোগের অধিকার বজায় রাখতেই এমন ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের সমালোচনায় সরব বিজেপি:
সরকার পক্ষ যাই বলুক না কেন, মুসলিম ঠিকাদারদের সংরক্ষণ দেওয়ার ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের এই আচরণ 'সংবিধান অমান্য করার ক্রমবর্ধমান অভ্যাস'।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে অমিত লিখেছেন, 'কর্ণাটক সরকার যদি মুসলমানদের জন্য এই কোটার ব্যবস্থা করে, তাহলে কার ভাগের সংরক্ষণ থেকে তা দেওয়া হবে - তফসিলি জাতির, তফসিলি উপজাতির নাকি অন্য়ান্য অনগ্রসর শ্রেণির? তেলঙ্গনাতেও মুসলমানদের ৪ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তা দেওয়া হয়েছিল সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীগুলির জন্য বরাদ্দ সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে...।'
'...মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন এমভিএ জিন্নার মতোই সর্বভারতীয় উলেমা পরিষদকে মেনে নিয়েছিল। পুরোটাই করা হচ্ছে, কংগ্রেস যাতে মুসলিম ভোট নিজেদের ঝুলিতে পুরতে পারে, তার জন্য। এর ফলে লাগাতার সংবিধানের অবমাননা করা হচ্ছে। কারণ, সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে কোনও সংরক্ষণের কথা বলে না।'