হাসিনা সরকারের পতনের পরই বাংলাদেশের স্কুলগুলিতে পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকে নানা বদল আনা হয়েছে। কার্যত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান! বদলে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদল আর তার প্রেক্ষাপটকেই কার্যত বিপ্লব হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই উদ্যোগের সবথেকে বড় উপাদান হল, গত জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু, এবার সেই জুলাই আন্দোলন সম্পর্কেই পাঠ্যবইয়ে 'ভুল তথ্য' ছাপানোর অভিযোগ উঠল!
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনার জন্য 'জাতীয় পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক পর্ষদ' (এনসিটিবি)-কে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য হল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে একেবারে 'সঠিক,যথাযথ গবেষণালব্ধ এবং দ্ব্যর্থহীন তথ্যাবলী' তুলে ধরাই এনসিটিবি-র অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
অথচ, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে, তারা ঠিকঠাক গবেষণা এবং ফ্যাক্ট চেকিং না করেই নতুন পাঠ্যবইয়ে 'তথ্য' তুলে দিচ্ছে! যা নিয়ে নানা মহলের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে।
কেন বলা হচ্ছে একথা?
'দ্য ডেলি স্টার'-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কে যেসমস্ত ভুল তথ্য পাঠ্যবইয়ে ছাপা হয়েছে, তা একইসঙ্গে 'উদ্বেগের ও অনভিপ্রেত'।
যেমন - পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে 'শহিদ নাফিসা হুসেন'-এর নাম ভুলবশত লেখা হয়েছে - 'নাহিয়া'! আবার, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আবু সইদ নামে একটি ছাত্রনেতার মৃত্যুর তারিখ আলাদা-আলাদা লেখা হয়েছে! অথচ, তাঁকে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ হিসাবে মনে করা হয়।
ভুলের আরও খতিয়ান:
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে উঠে এসেছে, নবম শ্রেণির ১১টি বইয়ে ৭৭টি ভুল, অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি ভুল, সপ্তম শ্রেণির পাঁচটি বইয়ে ১১টি ভুল এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পাঁচটি বইয়ে ১০টি ভুল পাওয়া গিয়েছে।
এর মধ্য়েই একটি বইয়ে সর্বাধিক ১৭টি ভুল ধরা পড়েছে! সেটি হল - নবম শ্রেণির বিজ্ঞান (তদন্তমূলক গবেষণা) বই। এই প্রসঙ্গে এনসিটিবি-র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মহম্মদ ফারহাদুল ইসলামের দাবি, অধিকাংশ ভুলই আসলে হয়েছে বানান লিখতে গিয়ে। যা নাকি 'মোস্ট কমন'!
এনসিটিবি-কে তুলোধনা:
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য হল, এই ধরনের ভুল তথ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের অবদান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করবে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
তাতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থান আদতে সরকারি দমন নীতির বিরুদ্ধে এক তীব্র ও ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলন। এবং সেই আন্দোলন গড়ে তোলার নেপথ্যে আবু সইদ, গোলাম নাফিজ এবং আনাসের মতো ছাত্রনেতাদের অবদান অবিস্মরণীয়। তাই তাঁদের সম্পর্কে ভুল তথ্য পেশ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না বলেও দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এই ধরনের ভুলের জন্য এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো তুলোধনা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। একইসঙ্গে দাবি তোলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে এনসিটিবি-কে। ভুল সংশোধন করতে হবে এবং পুরো ব্যবস্থাপনাটিকেও আরও স্বচ্ছ করে তুলতে হবে।