বৈদেশিক মুদ্রা কেনার টোপ দিয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা প্রতারণা করার অভিযোগ উঠল একটি বিদেশি সংস্থার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ইতিমধ্য়েই চার্জশিট পেশ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি)। ইন্ডিয়া টুডে-র প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, যে ব্যক্তি এই ওই সংস্থার মালিক, তিনি একজন রুশ নাগরিক। নাম - পাভেল প্রোজোরভ।
ফোরেক্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের টোপ দিয়ে প্রতারণা:
পাভেলের সংস্থা আদতে একটি ফোরেক্স ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম (এই ধরনের সংস্থার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা কেনা যায়)। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুসারে, গত চার-পাঁচ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অক্টাএফএক্স নামে ওই সংস্থার লাগাতার বিজ্ঞাপন দেখা গিয়েছে।
জমকালো প্রচার ও বিজ্ঞাপন:
এমনকী, ওই সংস্থা আইপিএল-এ অংশ নেওয়া ক্রিকেট দলগুলিকে স্পনসর পর্যন্ত করেছে। কিন্তু, এত দিন কেউই জানতেন না, এই সংস্থা আদতে একটি দীর্ঘমেয়াদি পঞ্জি প্রকল্প। যার পত্তন করা হয়েছিল ভারতেই (বিদেশে অন্য়ান্য নামে চলে) এবং সেটাও শুধুমাত্র ভারতীদের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করার জন্য!
কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ?
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি অক্টাএফএক্স ইন্ডিয়া-র বিরুদ্ধে তাদের দ্বিতীয় চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেই চার্জশিটে, বিদেশে এই সংস্থার যে শাখা রয়েছে - অর্থাৎ - অক্টামার্কেট্স, সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পাভেল প্রোজোরভ, অক্টাএফএক্স-এর সিইও - যিনি ভারতের ব্যবসা সামাল দেন - অ্য়ানা রুদাইয়া এবং আরও নয় ব্যক্তির নাম রয়েছে। এছাড়াও, ইডি-র পেশ করা এই চার্জশিটে ৪১টি সংস্থার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ দায়ের:
এই সংস্থায় যে গন্ডগোল রয়েছে, তা প্রথম সামনে এসেছিল ২০২১ সালে। সেবছর পুণে শহরের শিবাজিনগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় দুই-তিনজন ব্রোকারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ছিল, অভিযুক্তরা এলাকার এমন কয়েকজন মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছেন, যাঁরা কথা বলতে এবং কানে শুনতে পারেন না। তাঁদের টোপ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যদি অক্টাএফএক্স-এ টাকা দেন, তাহলে সেই টাকা মাত্র পাঁচমাসে দ্বিগুণ এবং আটমাসে তিনগুণ করে ফেরত দেওয়া হবে।
সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, সংস্থা সম্পর্কে ভালো মতো কিছু না জেনেই সোশাল মিডিয়ায় অক্টাএফএক্স-এর দেদার বিজ্ঞাপন যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন - সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সর, টেলিভিশনের চেনা মুখ এবং এমনকী কিছু বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রী! যার ফলে প্রচুর মানুষ এই পঞ্জি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
মোটা বেতনে ব্রোকার নিয়োগ:
বাজার থেকে টাকা তুলতে প্রচুর ব্রোকার নিয়োগ করেছিল এই রুশ সংস্থা। তাদের বলা হত - 'ইন্ট্রোডিউসার'। গ্রাহক ধরে দিতে পারলেই তাঁরা মোটা টাকা কমিশন পেতেন। পারফরম্যান্স ভালো হলেই উপহার হিসাবে পেতেন - দামি গাড়ি, বাইক, সোনার চেন এমনকী, সোনার বার!
গোয়ার বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হত। সেইসব অনুষ্ঠানে সেরা ব্রোকারদের হাতে দামি পুরস্কার তুলে দেওয়া হত।
কীভাবে খোয়া যেত টাকা?
সূত্রের দাবি, প্রথম দিকে যখন বিনিয়োগকারীরা অল্প পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতেন। তখন তাঁদের লাভ হত। কিন্তু, একবার বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতেই তা তাঁরা হারাতে শুরু করতেন!
অভিযোগ অস্বীকার:
তাদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এই ফোরেক্স ফার্ম। তাদের বক্তব্য, ২০১১ সালে এই সংস্থার পথচলা শুরু হয়েছে। সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে তাদের। সেই গ্রাহকরা সকলেই সংস্থার কাজে অত্যন্ত খুশি। সংস্থার তরফে কঠোরভাবে জানানো হয়েছে, তারা কোনও আর্থিক প্রতারণা করেনি, কোনও অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকেনি।