মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী, পাক বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী তাহাউর রানাকে শীঘ্রই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ইকোনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, এর জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের অগস্ট মাসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তাহাউর রানা 'ভারতে প্রত্যর্পণ করার যোগ্য'। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সেই অনুসারে, রানাকে অবশ্যই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রানা। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া আইনবিরুদ্ধ। কিন্তু, সেই যুক্তি পরবর্তীতে মার্কিন আদালতে খারিজ হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়। মুম্বই হামলার সঙ্গে যে রানার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে, এবং তাঁকে যে অবশ্যই ভারতে এনে তদন্ত প্রক্রিয়া এবং বিচারের আওতাধীন করা দরকার, ভারত তার স্বপক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্যপ্রমাণও আমেরিকাকে দিয়েছে বলে মার্কিন আদালতের প্য়ানেল তা স্বীকার করেছে।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়। পরবর্তীতে সেই হামলার ঘটনায় ৪০৫ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা করে মুম্বই পুলিশ। সেই চার্জশিটে অভিযুক্তদের তালিকায় অন্যতম হলেন এই তাহাউর রানা।
মুম্বই পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, রানার সঙ্গে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তিনি তাদের হয়েই সমস্ত কাজ করতেন।
তদন্তে জানা যায়, মুম্বই হামলার আরও এক চক্রী হলেন ডেভিড কোলম্যান হেডলি। রানা সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরেই রানাকে ভারতে আনার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। কিন্তু, তাতে প্রাথমিকভাবে কিছু জটিলতা দেখা দেয়।
একটি মামলায় মার্কিন আদালতের জুরি সদস্যদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ডেনমার্কে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর ঘটনায় জঙ্গিদের নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন রানা। তাঁকে সেই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু, ভারতে - মুম্বই হামলার ঘটনায় জঙ্গিদের সাহায্যের অভিযোগ থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি দেন সংশ্লিষ্ট জুরিরা।
এরপর রানা তাঁর অপরাধের জন্য (ডেনমার্কের ঘটনায়) সাতবছর হাজতবাস করে বেরোনোর পরই তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানায় নয়াদিল্লি। রানা সেই প্রত্যর্পণ আটকানোর পূর্ণ চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত মার্কিন আদালত ভারতের দাবি ও যুক্তি মেনে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় মোট ১৬৬ জনের প্রাণ যায়। যাঁদের মধ্য়ে ৬ জন মার্কিন নাগরিকও ছিলেন। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে রক্তক্ষয়ী সেই হামলা চালিয়েছিল ১০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী।