বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের বিদায়ের নেপথ্যে আমেরিকার হাত থাকা নিয়ে চর্চা, তর্ক চলেছে বহুদিন। একটা সময় এই নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন শেখ হাসিনা নিজেও। যদিও পরে হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্যে আমেরিকা দায়ী নয়। তবে এবার প্রকাশ্যে এল আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের একটি রিপোর্ট। যা তারা মার্কিস স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা করেছিল। এনডিটিভি প্রফিটের রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের উল্লেখিত রিপোর্ট থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কীভাবে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ফাঁদ পেতেছিল আমেরিকার একটা অংশ। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের নামে 'রিপাবলিকান' থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির কোনও যোগ নেই। এবং এই প্রতিষ্ঠানে অর্থ সাহায্য করত ইউএস এইড। (আরও পড়ুন: ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনায় ভারতের বিবৃতিতে বদহজম, 'ব্যর্থতা ঢাকতে' বাংলাদেশ বলছে…)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার ১৩০৮, চলছে ‘ন্যারেটিভ’ বদলের চেষ্টা?
২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়কালের ওপর ভিত্তি করা এই রিপোর্টে রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে নাকি তাদের ইনস্টিটিউটকে ১৭০ জন গণতন্ত্রপন্থী সহযোগিতা করেছিল। এদিকে সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা আছে কীভাবে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট বাংলাদেশি গায়ক তৌফিক আহমেদের গান - 'এ দায় কার?' রিলিজ করতে সাহায্য করেছিল। এই গানে বাংলাদেশের 'সামাজিক অব্যবস্থা এবং সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বদলের ডাক দেওয়া হয়েছিল'। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, 'যদি সাধারণ মানুষ বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত থাকে, তাহলে তারা আরও বেশি করে সরকারি অত্যাচার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে। তাহলেই বাংলাদেশি মানুষ ক্ষমতা বদল এবং রাজনৈতিক সংস্কারে সমর্থ হবে।' (আরও পড়ুন: মোদীর সফরারের আগে ফের শুল্ক নিয়ে বড় ঘোষণা ট্রাম্পের, সঙ্গে তৈরি ‘সাসপেন্স’)
আরও পড়ুন: মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের আগে শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে ভারত: রিপোর্ট
তবে এই ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট কী? এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৩ সালে স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে একজন সেনেটর এবং হোয়াইট হাউজের প্রাক্তন একাধিক আধিকারিক আছেন। এদিকে এই প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি এবং ইউএস এইড। এর মধ্যে ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি হল একটি এনজিও। সেটির অর্থায়ন আবার করে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা। (আরও পড়ুন: ২.৮৬ নয়, ২ হলেই হয়... গ্রেড ধরে ধরে জানুন কত বাড়তে পারে সরকারি কর্মীদের বেতন)
এনডিটিভি প্রফিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, শিলেট এবং ঢাকার গ্রামীণ স্তরে ১৭০ জন গণতন্ত্রপন্থীকে চিহ্নিত করেছিল। তরা মূলত 'ইনফর্ম্যান্ট'-এর কাজ করেছিল। এদের নিয়ে নাকি ওয়ার্কশপ পর্যন্ত করা হয়েছিল। এরপর তৌফিককে টাকা দিয়ে দু'টি গান গাওয়ানো হয়েছিল - 'তুই পারিস', 'এই দায় কার?'। এদিকে বাংলাদেশের শিল্পী মহলকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করানোর বন্দোবস্ত করেছিল এই ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট। এই আবহে ইউটিউব এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মার্কিন অ্যাজেন্ডার ডকুমেন্টারি প্রচার করা হয়। সেই সময় খাদিজা রিয়ার মতো 'সমাজসেবীদের' অর্থসাহায্য দেয় ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের নিয়েও ওয়ার্কশপ করা হয়। প্রতিবেদনে দাবি কর হয়েছে, গণতন্ত্রের পাঠ দেওয়ার নামে বিভিন্ন ভাবে সরকার এবং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মনোভাব তৈরি করার চেষ্টা করেছিল ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট।