বিনায়ক দাশগুপ্ত, ঔরঙ্গজেব নকশবন্দী এবং সুনেত্রা চৌধুরী
বিজেপি নেতানেত্রীরা নিয়ম লঙ্ঘন করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কারণ সেক্ষেত্রে ভারতে সংস্থার ব্যবসার সম্ভাবনা ধাক্কা খাবে। ফেসবুকের শীর্ষস্তর থেকে নাকি এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে একটি রিপোর্টে দাবি করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’।
শুক্রবার গভীর রাতের প্রতিবেদনে ফেসবুকের এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ দাবি করেছে, ফেসবুকের ‘সিনিয়র ইন্ডিয়া পলিসি এগজিকিউটিভ’ আঁখি দাস নাকি বিষয়বস্তু পর্যালোচনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, যাতে তেলাঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হয়। যিনি মুসলিমদের উদ্দেশে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছিলেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ফেসবুকের উচ্চপদস্থ কর্ত্রী আঁখি ‘কর্মীদের বলেছেন যে (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র) মোদীর দলের রাজনীতিবিদদের (বিধি) লঙ্ঘনে শাস্তি দিলে দেশে (ভারত) সংস্থা ব্যবসার সম্ভাবনা ধাক্কা খাবে।’ যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফেসবুক। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়টি এখনও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি আঁখি।
কংগ্রেসের দাবি, বিজেপির নেতানেত্রীদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে ফেসবুক নরম মনোভাব নিচ্ছে বলে আগেই সরব হয়েছিল তারা। এমনকী আঁখির সঙ্গে দেখা করে সেই বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছিল। কংগ্রেসের মিডিয়া দলের এক উচ্চপদস্থ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আঁখি দাসের সঙ্গে দেখা করেছিলাম এবং আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম।’ দলের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘ফেসবুক নিয়ে (এই গোপন রিপোর্ট) ফাঁস বড়সড় ধাক্কা, কারণ একজন আশা করেন যে ফেসবুকের মতো সংস্থা পেশাদারিত্বের সঙ্গে চালানো হবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নয়া যে তথ্য আসছে, তাতে ফেসবুক ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের সঙ্গে বিজেপির কাছের সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।’
ফেসবুকের দাবি, এই সংক্রান্ত বিষয়ে সংস্থার নীতি ‘নিরপেক্ষ’। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে ফেসবুকের এক মুখপাত্রের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা উস্কানিমূলক মন্তব্য এবং বিষয়বস্তুর (কনটেন্ট) উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিই, যা হিংসায় প্ররোচনা দিতে পারে। কারোর কোনও রাজনৈতিক অবস্থান বা খুঁটির বিবেচনা না করেই আমরা সারা বিশ্বে এই নীতিই প্রণয়ন করি। তবে আমরা জানি, আমাদের আরও করতে হবে, স্বচ্ছতা এবং যথাযথতা নিশ্চিত করতে প্রণয়নের দিকে আমরা এগোচ্ছি এবং নিয়মিত অডিট করছি।’
বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিজেপির এক মুখপাত্র। তবে নাম গোপন রাখার শর্তে এক নেতা জানিয়েছেন, তেলাঙ্গানার বিধায়কের সঙ্গে সহমত পোষণ করে না বিজেপি এবং সেই মন্তব্যের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে বিজেপি।
এদিকে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর রিপোর্ট প্রকাশের কিছুক্ষণ পরেই আঁখিকে আড়াল করে একটি অভ্যন্তরীণ মেমোতে ফেসবুক ইন্ডিয়ার প্রধান অজিত মোহন বলেন, ‘আমি যে ব্যক্তিকে চিনি বা আঁখি এবং পাবলিক পলিসি টিমের দক্ষতার দ্বারা আমরা প্রতিদিন সম্মুখীন হওয়া যে অত্যধিক জটিল বিষয়ের ক্ষেত্রে উপকৃত হই, তা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়নি।’ সেই নোটের একটি কপিও দেখেছে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’।