সেনাকে আরও শক্তিশালী করতে মরিয়া কেন্দ্র!প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ৫০,০০০কোটি বরাদ্দের প্রস্তুতি

‘অপারেশন সিঁদুর'-এর সাফল্যের পর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে মরিয়া কেন্দ্র।সেই লক্ষ্যে দেশের প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তুতি নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।যা অনুমোদন পেতে পারে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে এনডিটিভি-র এক রিপোর্টে। এই টাকা খরচ হবে মূলত নতুন অস্ত্র, গোলাবারুদ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। সেনা সূত্রে খবর, তিন বাহিনীর জরুরি প্রয়োজন মেটানোই এই অতিরিক্ত বরাদ্দের মূল উদ্দেশ্য। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের পরেই সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটে ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যা গত বছরের তুলনায় ৯.৫৩ শতাংশ বেশি। এই মুহূর্তে দেশের মোট বাজেটের প্রায় ১৩.৫ শতাংশই যাচ্ছে প্রতিরক্ষা খাতে। ২০১৪-১৫ সালে যেখানে প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল মাত্র ২ লক্ষ ২৯ হাজার কোটি টাকা, আজ তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে।এবার তার উপর আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সম্ভাবনা, যা হলে মোট প্রতিরক্ষা বাজেট গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭.৩ লক্ষ কোটি টাকায়, যা ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সরকারের দাবি, এই বাড়তি বিনিয়োগ শুধু সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য নয়, বরং যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির দিক থেকেও তা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।

সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর স্ট্রাইকে ভারত দেখিয়ে দিয়েছে, সীমান্ত পেরোনোর প্রয়োজন না পড়েও শত্রুর ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। এই অভিযানে লক্ষ্য করা হয় পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি। অভিযানে ব্যবহৃত হয় এস-৪০০, ‘ত্রিউম্ফ’-এর মতো রাশিয়ান ব্যবস্থা, একাধিক দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। উল্লেখযোগ্যভাবে ‘আকাশ’ মিসাইল সিস্টেম-এর মতো এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তিও বড় ভূমিকা নিয়েছে।ভারতের প্রতিরক্ষা বলয় এতটাই শক্তিশালীভাবে সক্রিয় ছিল যে পাকিস্তান থেকে উৎক্ষেপণ হওয়া অধিকাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রতি আস্থা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।সম্প্রতি ইসলামাবাদকে চোখ রাঙিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ‘ভার্গবাস্ত্র’-এর সফল পরীক্ষা করেছে ভারত। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সোলার ডিফেন্স অ্যান্ড অ্য়ারোস্পেস লিমিটেডের তৈরি এই কাউন্টার ড্রোন সিস্টেম ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা ড্রোনকে ধ্বংস করবে এক নিমেষে।

এই প্রসঙ্গে ১২ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক ভাষণে বলেন, 'অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে আমাদের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকারিতা গোটা বিশ্ব দেখেছে। এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের তৈরি যুদ্ধাস্ত্রের মর্যাদা তৈরি হয়েছে।' এদিকে আকাশ মিসাইলের জনক প্রহ্লাদ রামারা এনডিটিভি-কে বলেছেন, আকাশের জন্য তার ট্যাগলাইন হল 'সারা আকাশ হামারা।' তিনি বলেন,'যদি আমরা অন্য দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনি, তাহলে এর অর্থ হল আমরা এটি আউটসোর্স করছি এবং আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্য কারুর হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে না।'