ফুলবাড়ি সীমান্তে ট্রাক চালকদের বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশে পাথর রফতানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মূলত বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে এই পাথর যায় ওপারে। এটি হল একমাত্র স্থলবন্দর যা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, ভুটান এবং নেপালকে সংযুক্ত করেছে। এই স্থলবন্দর মারফত প্রচুর পরিমাণে পাথর আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। যা মূলত ভারত এবং ভুটান থেকে যায়। তবে অনলাইন স্লট বুকিং সমস্যা নিয়ে ভারতীয় ট্রাক অপারেটরদের বিক্ষোভের কারণে এই স্থলবন্দর হয়ে পাথর আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে বন্দর হয়ে আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘অনুমতি পেলে ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ’এর হুঙ্কার বাংলাদেশের কমিশনের
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত বাংলাবান্ধা হয়ে আমদানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে ৯৫ শতাংশই হল পাথর। গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্লট-বুকিং পদ্ধতি নিয়ে ফুলবাড়ি সীমান্ত ট্রাক মালিক সমিতির প্রতিবাদের কারণে ভারত থেকে হার্ড রক আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এই নতুন পদ্ধতির ফলে বাংলাদেশে পণ্য রফতানিকারী ভারতীয় ট্রাকগুলিকে ছয় চাকার গাড়ির জন্য ৩ হাজার টাকা এবং ১০ থেকে ১২ চাকার গাড়ির জন্য ৫,০০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, ভুটানের ট্রাকগুলি এথেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকে। এই বৈষম্যের কারণে ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাকচালকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সেই পরিস্থিতিতে গত ৪ জানুয়ারি থেকে ভুটান এই বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশের পাথর রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ বিক্ষোভকারী ট্রাক চালকরা ভুটানের গাড়ি আটকে দিচ্ছেন।
বিক্ষোভের ফলে বাংলাবান্ধা বন্দরের ব্যস্ততা আর নেই। এরফলে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এখনকার শ্রমিকরা। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ৫,৮০০ ট্রাক বন্দর দিয়ে ১ লক্ষ ৬২ হাজার টন পণ্য পরিবহণ করেছিল। একই সময়ে, বাংলাদেশ ২২৮ ট্রাকের মাধ্যমে ভারতে পণ্য রফতানি করেছে এবং ২২৬ ট্রাক ব্যবহার করে নেপালে পণ্য রফতানি করেছে।
জানা গিয়েছে, এই বন্দরের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬৮.১৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরের মধ্যে ৭৭.২৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে বিক্ষোভের ফলে রাজস্ব আদায় ব্যহত হচ্ছে।।স্থানীয় ব্যবসা এবং বন্দরের কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক ইতিমধ্যেই এরফলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভুটান, ভারতের আরোপ করা নতুন স্লট-বুকিং ফি মেনে চলতে অস্বীকার করার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। ভুটান যদি ফি মানতে রাজি হয় তাহলে পাথরের দাম বাড়িয়ে দেবে বলে তিনি জানান। বাংলাবান্ধা আমদানি-রফতানি গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহিন বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি জানান। ফুলবাড়িতে উত্তরবঙ্গ রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্রিজ কিশোর প্রসাদও ভারত সরকারের প্রতি বিরোধ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বন্দর দিয়ে রফতানিতে প্রভাব পড়ছে না।