কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর সপ্তম সাধারণ বাজেট উপস্থাপনায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য প্রতিরক্ষা খাতে ৬.২১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। পাঁচ মাস আগে ঘোষণা করা অন্তর্বর্তী বাজেটের মতোই এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি সরকারের যে প্রতিশ্রুতি তাকেই পুনর্ব্যক্ত এই বাজেট বরাদ্দ করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এই বিশাল অঙ্কের বরাদ্দের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য ৬,২১,৯৪০.৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করছেন অর্থমন্ত্রী। এর জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এই বরাদ্দ যা ভারত সরকারের মোট বাজেটের ১২.৯%।"
বাজেটে সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী জন্য ১.৭২ লাখ কোটি টাকা মূলধন ব্যয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনাথ সিং সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘১.৭২ লাখ কোটি টাকার মূলধন ব্যয় সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। ১.০৫,৫১৮.৪৩ কোটি টাকা দেশীয় মূলধনে তৈরি নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আত্মনির্ভরতার জন্য আরও উৎসাহ প্রদান করবে।’
সীমান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ
বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর বরাদ্দ ৩০% বৃদ্ধি পেয়ে ৬,৫০০ কোটি টাকা হয়েছে। রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে সীমান্ত রাস্তার জন্য গত বাজেটের তুলনায় ৩০% বাড়িয়ে ৬,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দ সীমান্ত নিরাপত্তা পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।’
প্রতিরক্ষা স্টার্টআপগুলির জন্য বরাদ্দ
প্রতিরক্ষা খাতে উদ্ভাবন বাড়ানোর জন্য বাজেটে আইডিইএক্স স্কিমের জন্য ৫১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা স্টার্টআপ, এমএসএমই এবং উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করবে। রাজনাথ সিং বলেন, ‘প্রতিরক্ষা শিল্পে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে উৎসাহিত করতে, আইডিইএক্স স্কিমের জন্য ৫১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’
২০২৪ অর্থবর্ষের জন্য সংশোধিত প্রতিরক্ষা বরাদ্দ
ফেব্রুয়ারিতে, ২০২৪ অর্থবর্ষের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ৫.৯৪ লাখ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.২৪ লাখ কোটি টাকা করা হয়েছিল। যদিও ২০২৫ অর্থবর্ষের অন্তর্বর্তী বরাদ্দ সামান্য কম, তবুও এটি অন্যান্য মন্ত্রকের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মোট বাজেটের প্রায় ১৩%। মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ২৭.৬৭% মূলধন ব্যয় হিসেবে ১.৭২ ট্রিলিয়ন টাকা নতুন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি অর্জনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা বাজেটের বিভাজন
প্রতিরক্ষা বরাদ্দের প্রায় ২৮%, বা ১.৭২ লাখ কোটি টাকা মূলধন ক্রয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর রাজস্ব ব্যয় (বেতন বাদে) ৯২,০৮৮ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা পেনশন ১.৪১ লাখ কোটি টাকা। এছাড়াও, ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জন্য ৭,৬৫১.৮০ কোটি টাকা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) জন্য ২৩,৮৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা উৎপাদন ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ১.২৭ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ১.০৯ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থানীয়করণ প্রচেষ্টার ফলে গত তিন বছরে ১২,৩০০টিরও বেশি সামগ্রী দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।
ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ক্রয় ও রপ্তানি
অনুমান করা হচ্ছে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরে মূলধন ক্রয়ের জন্য প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। সরকার দেশীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানিকৃত সামরিক সরঞ্জামের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগামী পাঁচ বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার, বা ১.৭৫ লাখ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা উত্পাদন টার্নওভার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বর্তমান ২১,০৮৩ কোটি টাকা থেকে ৫০,০০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।