একদিকে, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, যেভাবে দেশজুড়ে মসজিদের নীচে মন্দির খোঁজা হচ্ছে, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকী, এর জন্য কিছু হিন্দু, যাঁরা নেতা হয়ে উঠতে চান বলে মনে করেন মোহন ভাগবত, তাঁদেরই কাঠগড়ায় তোলেন তিনি!
কিন্তু, এবার ভাগবতের 'উল্টো সুরে গাইল' আরএসএস পৃষ্ঠপোষকতায় চলা সাপ্তাহিক পত্রিকা - 'অর্গানাইজার'! পত্রিকার সর্বশেষ ইস্যুতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অংশে যে মন্দির সংস্কারের দাবি উঠছে, তা আসলে 'সভ্যতার ন্য়াবিচার' (সিভিলাইজেশনাল জাস্টিস)!
বস্তুত, ওই পত্রিকার এবারের সংস্করণে যে প্রচ্ছদ কাহিনি প্রকাশ করা হয়েছে, তার শিরোনাম - 'ব্যাটল ফর সিভিলাইজেশনাল জাস্টিস' (সভ্য়তার ন্য়ায়বিচারের জন্য যুদ্ধ)! মূলত, সম্ভলের সাম্প্রতিক মন্দির-মসজিদ বিতর্ক নিয়েই এই প্রচ্ছদ কাহিনি লেখা হয়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে অবস্থিত মসজিদের স্থানেই নাকি একটা সময় মন্দির ছিল। বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
সেই অনুসারে, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকরের লেখা ওই প্রচ্ছদ কাহিনিতে বলা হয়েছে, সময়ে এসে গিয়েছে। এবার সভ্যতার ন্যায়বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হবে। বাবা সাহেব আম্বেদকর জাতিপাতের অসাম্য়ের একেবারে গভীরে পৌঁছতে পেরেছিলেন এবং তা শেষ করতেই সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করেছিলেন। ধর্মীয় চরমপন্থা এবং বৈষম্য সমূলে উৎখাত করতেও আমাদের একই রকম উদ্যোগ করা দরকার।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কদিন আগেই ভাগবত বিশেষ করে হিন্দু নেতাদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছিলেন, যদি তাঁরা দেশের সর্বত্রই রাম মন্দিরের মতো ইস্যু তৈরি করেন, তাহলে বিশ্বমঞ্চে তার ভালো বার্তা যাবে না। আন্তর্জাতিক মহলে ভারতকে তার ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি রক্ষা করার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন ভাগবত।
কিন্তু, এই পত্রিকার প্রচ্ছদ কাহিনিতে ভাগবতের সেই সাবধানবাণী উল্লেখ করা হয়নি। বদলে এখানে বলা হয়েছে, যে ধর্মস্থানগুলির চরিত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, ঐতিহাসিকভাবে সেখানে কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখেই সত্যকে সামনে আনতে হবে।
ওই প্রচ্ছদ কাহিনিতে লেখা হয়েছে, 'ইতিহাসের সত্যতা স্বীকার করে নিতে হবে। এবং সেই ভিত্তিতেই এগোতে হবে। যারা ধর্মীয় অপরাধী, তাদের থেকে ভারতীয় মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এবং সভ্যাতাগত ন্য়ায়বিচার করতে হবে। যার মাধ্যমে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব কায়েম হবে।'
এই প্রচ্ছদ কাহিনিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, কিছু ঔপনিবেশিক মানসিকতার তথাকথিত এলিট শ্রেণি এবং ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবী ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ন্য়ায়বিচার ও সত্য জানার অধিকার লঙ্ঘন করতে চাইছেন। এই ধরনের ঘটনা চলতে থাকলেই বরং তা উগ্রবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও শত্রুতায় ইন্ধন জুগিয়ে চলা হবে।