কিয়েভ যদি প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে ‘মুহূর্তেই’ রাশিয়া আক্রমণ থামাবে বলে উল্লেখ করেছে মস্কো৷ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই কথা বলেছেন৷
যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার পক্ষে চারটি শর্ত দিয়েছেন দিমিত্রি পেসকভ৷ সেগুলো হল:
- ইউক্রেনকে অস্ত্রচালনা বন্ধ করতে হবে৷
- ইউক্রেন ন্যাটো বা ইইউতে যোগ দেবে না ও নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে এমন সাংবিধানিক ঘোষণা দিতে হবে৷
-ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার সার্বোভৌমত্বের স্বীকৃতি দিতে হবে৷
-লুহানৎস ও ডোনেত্সকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিতে হবে৷
পেসকভ শর্তগুলি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা সত্যিকার অর্থেই ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন করছি৷ আমরা এটা শেষ করব৷ মূল বিষয়টি হচ্ছ ইউক্রেন তার সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে৷ তারা তাদের সামরিক কার্যক্রম থামালে কেউ কোনও গুলি করবে না৷’ তিনি জানান এই শর্তগুলোর বিষয়ে কিয়েভও অবগত রয়েছে৷ এমন অবস্থায় সোমবার দুপুরে দুই দেশের প্রতিনিধিরা পোল্যান্ড, বেলারুশ সীমান্তে বৈঠকে বসছেন৷
তুরস্কে আলোচনায় বসবেন রুশ ও ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী
আগামী বৃহস্পতিবার তুরস্কে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা৷ সোমবার রাশিয়ার সংবাদ সস্থা টিএএসএসকে দেশটির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেন৷ বার্তা সংস্থা এএফপি টিএএসএস-এর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সম্মতি দিয়েছেন৷ এর্দোয়ান এই বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানানো হয়ে সংবাদ সংস্থাটির পক্ষ থেকে৷
গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর এটিই এমন উচ্চপর্যায়ের প্রথম বৈঠক হতে যাচ্ছে৷ এর আগে দুই দফায় দেশ দুইটির সরকার প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসলেও যুদ্ধ বন্ধে তা ভূমিকা রাখতে পারেনি৷ সোমবার তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু দেশটির গণমাধ্যমে সম্ভাব্য বৈঠকের ঘোষণা দেন৷ আনাতোলিয়াতে সেই বৈঠকে তিনি নিজেও অংশ নিবেন বলে জানান৷
ন্যাটো সদস্য তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমুদ্রসীমা রয়েছে৷ দেশ দুইটিকে শুরু থেকেই আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল আঙ্কারা৷ মস্কো ও কিয়েভ দুই পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও রাশিয়ার হামলাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে অভিহিত করে আসছে তারা৷ তবে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞারও বিরোধিতা করে আসছে আঙ্কারা৷ এর আগে শনিবার ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছিলেন ফলপ্রসূ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তিনি লাভরভের সঙ্গে বসতে রাজি৷
রাশিয়ার মানবিক করিডরের প্রস্তাব ইউক্রেনের প্রত্যাখ্যান
রাশিয়ার প্রস্তাবিত মানবিক করিডর বেলারুশ ও রাশিয়াকে যুক্ত করায় একে ‘সম্পূর্ণ অনৈতিক’ হিসেবে অভিহিত করেছে ইউক্রেন৷ মানবিক করিডরের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী৷
ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার ঘোষিত মানবিক করিডরে দেশটির মানুষকে স্বাধীনভাবে সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ এমনভাবে সেটি করা হয়েছে যাতে তারা বেলারুশ বা রাশিয়ার দিকে যেতে বাধ্য হন৷ ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুক এক প্রতিক্রিয়ায় এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷’ তার বদলে ইউক্রেনীয়দের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে সোমবার থেকে পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী পশ্চিম ইউক্রেনের শহর লাভিভে যুদ্ধবিরতি চান তারা৷
এর আগে সোমবার সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আলোচনার পর ইউক্রেনকে প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়া৷ চারটি শহর কিয়েভ, খারকিভ, মারিউপল এবং সুমিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়৷ সেখান থেকে সাধারণ মানুষকে দ্রুত সরে যেতে বলা হয়৷ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আশঙ্কা, যুদ্ধবিরতি শেষ হলেই রাশিয়া চূড়ান্ত শক্তি দিয়ে কিয়েভে হামলা করবে৷ ভেরেসচুক বলেন, ‘আমি আশা করব প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুঝতে পারবেন যে তাঁর নাম এবং আন্তরিক চেষ্টাকে রাশিয়ান ফেডারেশন অপব্যবহার করছে৷’
শনিবারও দুইটি শহরে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল৷ তবে এর মধ্যও রাশিয়ার গোলাগুলির কারণে শহর দুইটি থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হয় বলে দাবি করেছে ইউক্রেন৷
রাশিয়ার প্রস্তাবিত ছয়টি মানবিক করিডর
-কিয়েভ থেকে গোমেল, দক্ষিণ-পূর্ব বেলারুশ
-মারিউপোল থেকে জেপোরিজঝিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেন
-মারিউপোল থেকে রস্তভ-অন-ডন, দক্ষিণ রাশিয়া
-খারকিভ থেকে বেলগোরোদ, দক্ষিণ রাশিয়া
-সুমি থেকে বেলগোরোদ
-সুমি থেকে পোলতাভা, মধ্য ইউক্রেন
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)