রাশিয়ার তেলের ওপর নতুন করে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই নয়া নিষেধাজ্ঞা জারির পরই তেল শোধনকারী সংস্থা থেকে শুরু করে ট্যাঙ্কার অপারেটর, বন্দর কর্তৃপক্ষগুলি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে পড়ে যায়। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাশিয়ান তেল উৎপাদক কোম্পানি গ্যাজপ্রম এবং সারগুতনেফতেগ্যাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এছাড়া তেল বহনকারী ১৮৩টি জাহাজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। (আরও পড়ুন: ন্যূনতম EPS পেনশন ৭.৫ গুণ বাড়ানো হতে পারে কেন্দ্রীয় বাজেটে? বড় দাবি রিপোর্টে)
আরও পড়ুন: এবার বাংলার আরও এক নয়া রুটে বসতে পারে রেললাইন, শুরু হল সমীক্ষা
নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার তেল রফতানিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আবহে চিনের শ্যানডং প্রদেশে অবস্থিত তেল শোধনাগারগুলি রবিবারই বৈঠকে বসেছিল। যখন এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণ করা হয়, সেই সময় যে জাহাজগুলি চিনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে, সেই তেল কিনলে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে মাথা চুলকোতে থাকে তারা। এদিকে বর্তমানে ভারতের মোট তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশই রাশিয়া থেকে আসে। এই আবহে তেল রফতানিতে 'ঝটকার' জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে তারা। উল্লেখ্য, রাশিয়া থেকে জ্বালানি নিয়ে তা পরিশোধিত করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে ভারতীয় সংস্থাগুলি। তবে এই নিষেঝধাজ্ঞার জেরে ভারতীয় ঘরোয়া বাজারে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। (আরও পড়ুন: 'আমার স্ত্রী তো...', এবার '৯০ ঘণ্টা কাজ' বিতর্কে 'আদর মাখা' উক্তি পুনাওয়ালার)
আরও পড়ুন: মহাকুম্ভের ক্যাম্পে স্টিভ জোবসের স্ত্রী লরেন, সঙ্গমে পূণ্যস্নান করবেন ১৪ তারিখ
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা জাহাজগুলি গত বছর ৫৩০ মিলিয়নের বেশি ব্যারেল রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিবহন করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল চিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকি তেলের বেশির ভাগই ভারতকে সরবরাহ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া হামলা চালাতেই কড়া পদক্ষেপ করেছিল আমেরিকা। রুশ জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তারা। তবে আন্তর্জাতিক ভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। এই আবহে ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কিনতে থাকে। কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে ভারতের ওপর বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ আসতে থাকে। রাশিয়া থেকে তেল কিনতে বারণ করা হয়েছিল দিল্লিকে। তবে ভারত নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছিল।
ক্রমেই রাশিয়া থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ভারতে পরিশোধিত হয়ে আমেরিকা বা ইউরোপের বন্দরে গিয়ে পৌঁছত। এছাড়া ওপেকভুক্ত দেশগুলির থেকে রাশিয়ার তেলের দাম অনেকটাই কম ছিল। এই সব সমীকরণ মিলিয়ে ভারত ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ২৫ বিলিয়ন ডলার বাঁচায় ভারত। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারত ১৫৭.৫ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনেছিল রাশিয়া থেকে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সেই পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। তা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে ভারত গত অর্থবর্ষে ১৩২.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে বলে জানা গিয়েছে। ভারত ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২৩২.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল। আর ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সেই পিমাণটা ছিল ২৩২.৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, গত অর্থবর্ষে ভারত আরও সস্তায় জ্বালানি তেল কিনতে সক্ষম হয়েছিল রাশিয়ার থেকে। এর ফলে ভারত ১৬ শতাংশ টাকা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল। এই আবহে রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেল কেনার জন্য ভারত দুই বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।