গত পাঁচ বছরে সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলির মধ্য়ে যেগুলির তাৎপর্য সবথেকে বেশি, নিঃসন্দেহে তার মধ্য়ে অন্যতম হল - ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। যা এখনও বিদ্যমান! আর এই যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলে, যাঁর কথা অনিবার্যভাবে বলতেই হয়, তিনি হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রুশ গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি-র হয়ে একটা সময় কাজ করতেন পুতিন। সেই প্রাক্তন গুপ্তচর প্রথমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে বসেন ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তারপর প্রায় ২৫ বছর কাটতে চলল। পুতিনের আসন কেউ টলাতে পারেনি। কখনও তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে দেশ শাসন করেছেন, আবার কখনও শাসনভার চালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে। কিন্তু, দিন শেষে তিনিই হয়ে উঠেছেন গোটা দেশের শেষ কথা!
বস্তুত, ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করে, যে পুতিন একদিন গণতন্ত্র রক্ষার বাণী আউড়ে রাশিয়ার মসনদে বসেছিলেন, আজ তিনি কার্যত রাশিয়ার একজন আধুনিক 'জার'-এ পরিণত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই বক্তব্য, বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্য়ে যে যুদ্ধ চলছে, তা আদতে শুরুই হত না, যদি না পুতিন রাশিয়ার মসনদে থাকতেন। আসলে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের শত্রুতা নতুন কিছু নয়। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা ন্য়াটো ইউক্রেনকে পছন্দ করলেও রাশিয়া তাদের বরাবরের শত্রু।
এমতাবস্থায় একদিকে যখন আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইজরায়েল প্রভৃতি দেশ জোট বাঁধছে, উলটোদিকে তখন রাশিয়া, চিন, সিরিয়া (বাশারের আমলে), উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়ছে। অনেকেই বলেন, এই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের ভূমি দখল করে আসলে আমেরিকা ও তার বন্ধুদেরই বেঁধে রাখতে চেয়েছে রাশিয়া। সেই কারণেই আগ্রাসন, সেই কারণেই যুদ্ধ। যার সূত্রপাত ঘটে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু, ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলেন, এক্ষেত্রে একটা বিষয় হয়তো পুতিনের হিসাবের মধ্যে ছিল না। সম্ভবত, রুশ রাষ্ট্রপ্রধান ভাবতেও পারেননি ইউক্রেনের সেনা ও আমজনতা তাঁর বাহিনীকে যোগ্য জবাব দেবে।
ঘটনা হল, যুদ্ধের ফলে প্রাণহানি, সম্পদহানি তো ঘটছেই। তার থেকেও বড় কথা, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে এর বিরাট প্রভাব পড়েছে। পশ্চিমী দুনিয়া আগাগোড়া এই ঘটনাকে রাশিয়া বা আরও নির্দিষ্টভাবে বললে পুতিনের আগ্রাসন হিসাবেই দেখেছে। রাশিয়ার উপর অসংখ্য বিধিনিষেধ চাপানো হয়েছে। এমনকী, এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে ভারতকে পর্যন্ত একাধিকবার প্রশ্নের মুখ পড়তে হয়েছে।
এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্বের অধিকাংশই দেশই পুতিনকে দায়ী করছে। যদিও পুতিন তাতে দমবার পাত্র নন। তিনি রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করেছেন। উপরন্তু, রুশ পরমাণু নীতিতে বিরাট বদল এনেছেন। অভিযোগ, এর মাধ্যমে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছেন পুতিন, যাতে নানা অজুহাতে চাইলেই যেকোনও দেশের উপর পরমাণু হামলা করা যায়। যদিও ক্রেমলিন তা মানতে নারাজ।
আর এই প্রেক্ষাপটেই লাইম লাইটে চলে এসেছেন আরও একজন, যাঁর কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইদানীংকালে, তিনি নিঃসন্দেহে একজন ব্যতিক্রমী চরিত্র। একসময় যিনি ছিলেন নৃত্যশিল্পী, রুশ হামলার পর সেই তিনিই একেবারে সামনে থেকে ইউক্রেনের বাহিনীকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বস্তুত, সেভাবে দেখলে একথা বলাই যায়, যে ইউক্রেন দেশটাকে কার্যত তুড়ি মেরে জয় করার কথা ভেবেছিলেন পুতিন, আজ তাঁরই সৌজন্যে সেই ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বের একটা বিরাট অংশের মানুষের চোখে 'রিয়েল লাইফ হিরো'র মর্যাদা পেয়েছেন।