শনিবার সংসদীয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে চিনের সঙ্গে সীমান্ত দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে ভারতের বিদেশনীতি নিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়ালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
বিদেশমন্ত্রী ঘণ্টাব্যাপী ভাষণ শেষ করার পরে রাহুল তাঁর বক্তব্যকে চিনের হুমকির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট রণকৌশলের পরিবর্তে একটি ‘ধোপাখানার তালিকা’ পেশ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এর আগে একই উপমা টেনেছিলেন আর এক কংগ্রেস সাংসদ তথা ইউপিএ জমানায় বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শশী থারুর।
জবাবে জয়শংকর বলেন, বহু মেরুকরণে বিভক্ত বিশ্ব তথা মহাদেশে সমস্যাটির মোকাবিলায় সহজতর কৌশল নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি, এর পালটা হিসেবে জয়শংকরকে রাহুল প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কাছে কোনও পরিষ্কার নীতি রয়েছে, যার সারসংক্ষেপ তিনটি বাক্যে করা সম্ভব?’
এর পর রাহুল বলেন, ‘চিনের রণনীতি হল, জল থেকে আকাশে অবস্থান পরিবর্তন করা, প্রাচীন রেশমপথকে সড়কপথে পরিবর্তন করে চিনের সঙ্গে ইউরোপের সংযোগ স্থাপন করা এবং উপসাগরের সঙ্গে সিপিএসি-র মাধ্যমে যোগসূত্র তৈরি করা। একই সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্রকে উপেক্ষা করে ভারতের গুরুত্ব হ্রাস করার চেষ্টাও চালাচ্ছে চিন। এই সমস্যার কী ভাবে মোকাবিলা করবে ভারত?’
বিশ্বকে মেরুকণের দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করার চিনা চেষ্টা নিয়ে রাহুলের উদ্বেগের উত্তরে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে উড়িয়ে দিতে পারি না। জাপানও ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র হিসেবে উঠে আসছে। বিশ্ব যাতে নানান মেরুকরণে বিভক্ত হয়, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা যথাসাধ্য করব। একই সঙ্গে আমাদের বহুমেরু সমৃদ্ধ মহাদেশের কথাও মাথায় রাখতে হবে।’
জয়শংকর বলেন, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বিতর্ক অনন্তকাল চলতে পারে, কারণ উভয়েরই বহু যুক্তি ও পালটা যুক্তি হাতে রয়েছে। এরই মাঝে ইউপিএ আমলের বিদেশনীতির প্রসঙ্গ তুলে বৈঠকে কংগ্রেস বিধায়করা যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেন।
বৈঠকে জয়শংকর দাবি করেন, গত ছয় বছরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের নাটকীয় উন্নতি ঘটেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি উপসাগরীয় দেশগুলির ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে বর্তমানে গভীরতর হয়েছে বলে জানান বিদেশমন্ত্রী। তাঁর দাবি, মোদী সরকারের এই প্রপচেষ্টার ফলেই কোভিড অতিমারী পরিস্থিতিতে সেই সব দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রতি সুব্যবহার প্রদর্শন করেছে বিদেশি প্রশাসন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সাল পর্যন্ত চিন সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে বছরে ৪,৬০০টাকা খরচ করা হয়েছে, কিন্তু তার পর থেকে তা বাড়িয়ে ১১,৮০০ টাকা করা হয়েছে। তাঁর মতে, অতীতে সীমান্তকে গাফিলতি করারই খেসারত দিতে হচ্ছে ভারত সরকারকে।