এবার 'নেহরু উন্নয়ন মডেল' নিয়ে তোপ দাগলেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর দাবি, নেহরু উন্নয়ন মডেল আসলে একটি 'নেহরু বিদেশ নীতি' নির্মাণ করেছিল। যা সংশোধন করার কাজ শুরু করেছে বর্তমান সরকার।
শনিবার জয়শঙ্কর বলেন, তাঁরা 'ঘরে'র (দেশের অভ্যন্তরে) পাশাপাশি 'বিদেশের মাটিতেও' নেহরুর সেই উন্নয়ন মডেল সংস্কার করার কাজ শুরু করেছেন।
শনিবার ভার্চুয়ালি একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী। 'দ্য নেহরু ডেভলপমেন্ট মডেল' শীর্ষক ওই বইটির লেখক হলেন নীতি আয়োগের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগারিয়া।
সেই বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, এই বইয়ে লেখক নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পছন্দগুলি ভারতকে একটি 'নির্ণায়ক পথে' এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
মন্ত্রী আরও বলেন, 'এই মডেল এবং তার সম্পর্কে যে ন্যারেটিভটি গড়ে তোলা হয়েছিল, তা আমাদের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং অবশ্যই পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা, বিচার ব্যবস্থা, নাগরিক বিষয়সমূহ - যার মধ্যে সংবাদমাধ্যমও রয়েছে, এবং প্রায় সমস্ত শিক্ষাকেই প্রভাবিত করেছে।'
এই প্রসঙ্গে চিন ও রাশিয়ার অর্থনীতিও উল্লেখ করেন বিদেশ মন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে এই দু'টি দেশই সেই সময়কার অর্থনৈতিক অনুমানগুলিকে 'ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান' করেছে। অথচ, একটা সময় তারা অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় অনেক বেশি করে সেই নীতির প্রচার করেছিল।
কিন্তু, আমাদের দেশে আজও প্রভাবশালীদের একটা অংশের মধ্যে সেই সময়কার ভাবনাগুলি 'জিইয়ে রাখা হয়েছে' বলে মনে করা হচ্ছে।
এরপরই জয়শঙ্কর দাবি করেন, নেহরু মডেলে যে ভুলগুলি ছিল, বর্তমান সরকার ২০১৪ সাল থেকেই সেগুলি সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট বইটির লেখক এক্ষেত্রে বলেছেন, সেই কাজ অনেকটাই বাকি রয়েছে। এবং লেখকের এমন সিদ্ধান্তে আসার যথেষ্ট যুৎসই কারণ রয়েছে।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জয়শঙ্কর আরও বলেন, 'নেহরু উন্নয়ন মডেল আসলে একটি 'নেহরু বিদেশ নীতি' নির্মাণ করেছিল। আমরা সেটা বিদেশের মাটিতে সংশোধন করার চেষ্টা করছি। ঠিক যেভাবে ঘরের মাটিতেও আমরা এই নীতির প্রভাবগুলি সংশোধন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
জয়শঙ্কর তাঁর শনিবারের এই ভার্চুয়াল ভাষণ শুরু করেন এক মার্কিন রাজনীতিকের বিখ্যাত একটি উক্তি ধার করে। যেটা তিনি করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে।
জয়শঙ্কর বলেন, '১৯৪৭ সালে জন ফস্টার ডুয়েলস (একটি কথা) বলেছিলেন, আমি তাঁকে উদ্ধৃত করেই বলছি - ভারতে একটি অন্তর্বর্তী হিন্দু সরকারের মাধ্যমে তীব্রভাবে সোভিয়েত কমিউনিজম পালন করা হচ্ছে - তিনি অবশ্যই তৎকালীন সরকারের উদ্দেশে এই মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ যেটা, তা হল - স্বাধীন ভারতকে মার্কিন রাজনীতিক ও নীতি নির্ধারকরা অতি-প্রতিক্রিয়াশীল হিসাবে গণ্য করতেন।'
জয়শঙ্কর আরও জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, সেই সময় ডুয়েলস ভারত সম্পর্কে যা বলেছিলেন, তা কি ঠিক বলেছিলেন? বিদেশ মন্ত্রীর দাবি, এই প্রশ্নের জবাব তিনি সংশ্লিষ্ট বইটিতেই পেয়েছেন।
তাঁর মতে, ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার পরপরই একটি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক মেডল বা নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় নানাভাবে তার প্রচারও করা হয়। কিন্তু, কখনও এর খোলনলচে বদল করা হয়নি।
আর এই জায়গা থেকেই জয়শঙ্কর দাবি করেন, তাঁদের সরকারকে বহু পুরোনো এই মডেল বা নীতির সংস্কার করতেই হত। এবং তাঁরা সেটাই করছেন। যদিও একইসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রী একথাও স্বীকার করেছেন যে গত ৩৩ বছরে মুক্ত অর্থনীতির মাধ্যমে ভারত উপকৃত হয়েছে। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতি সেই সময়কার তুলনায় অনেক বেশি জটিল।