'মোদীজি নে ওয়ার রুক ওয়া দি পাপা'- বিজেপির একটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিমের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। সেটির আদলে পালটা ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছিল। আর এবার ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এ একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই ভাইরাল বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। রাশিয়ায় আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘যুদ্ধ থামিয়েছিলেন’, সেটারও ব্যাখ্যা দেন। তিনি দাবি করেছেন, পুরো বিষয়টি তাঁর সামনেই হয়েছিল। ফলে তিনি সত্যিটা জানেন। সেই পরিস্থিতিতে ‘মোদীজি নে ওয়ার রুক ওয়া দি পাপা’ বিজ্ঞাপনের মধ্যে কোনও ভুল নেই বলে দাবি করেছেন জয়শংকর।
জয়শংকর ঠিক কী বলেছেন?
‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এ জয়শংকর জানান, পুরো বিষয়টির মধ্যে দুটি পর্ব আছে। একটি হয়েছিল খারকিভে। অপরটি হয়েছিল সুমিতে। খারকিভের ক্ষেত্রে মোদী ফোন করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। আর সুমির ঘটনার ক্ষেত্রে তিনি পুতিনের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কিকেও মোদী ফোন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন জয়শংকর।
খারকিভে কী হয়েছিল?
জয়শংকর জানিয়েছেন, খারকিভে গোলাগুলি চলছিল। সেই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের বের করে আনতে একটি সেফ জোন তৈরি করা হয়েছিল। সেইসময় পরিবহণের কোনও বালাই না থাকায় হেঁটেই তাঁদের খারকিভ শহর থেকে তাঁদের বেরোতে হচ্ছিল। কিন্তু তখনই সেফজোনের নিকটবর্তী এলাকায় গোলাগুলি শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদী সরাসরি কথা বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন জয়শংকর।
তাঁর কথায়, '(পুতিনকে ফোন করে মোদী বলেন যে) দেখুন, আপনাদের লোক এবং আমাদের লোকেদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এটা (গোলাগুলি) চলছে। তাই আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করছি যে বিষয়টি একটু দেখুন এবং (কিছুক্ষণের জন্য) এই (গোলাগুলি) বন্ধ করুন। সেটা কাজে দিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা লেগেছিল। কিন্তু রাশিয়া গোলাগুলি ছোড়া বন্ধ রেখেছিল। (সেইসময়) বাস ওখানে পৌঁছে গিয়েছিল এবং ভারতীয়দের সুরক্ষিতভাবে বের করে নিয়ে এসেছিল।'
সুমিতে কী হয়েছিল?
‘মোদীজি নে ওয়ার রুক ওয়া দি পাপা’-র বিষয়টি উদ্ধৃত করে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এ জয়শংকর জানান, সুমির পরিস্থিতিটা আরও জটিল ছিল। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সেখানে ইউক্রেনের জঙ্গিদের মতো কোনও বাহিনী ছিল। যারা কারও ঠিক নিয়ন্ত্রণে ছিল না বলে মনে হয়। তাই প্রত্যেকে প্রত্যেককে লক্ষ্য করে গোলাগুলি চালাচ্ছিল। তারইমধ্যে পড়ুয়ারাও ধৈর্য হারাচ্ছিলেন। কারণ তাঁদের মনে হচ্ছিল যে বাকি সবাই সুমি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
সেই পরিস্থিতিতে পুতিন এবং জেলনস্কিকে মোদী ফোন করেছিলেন বলে জানান জয়শংকর। তিনি বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রী বলি যে আপনাকে পুতিন এবং জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলতে হবে। উনি কথা বলতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। দু'জনের সঙ্গে কথা বলেন (মোদী)। উনি বলেন যে দেখুন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা চাই যে আপনাদের বাহিনী কিছুক্ষণের জন্য (গোলাগুলি ছোড়া থেকে) বিরত থাকুক এবং আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা দিন। আমার আধিকারিকরা পুরো বিষয়টি ঠিক করে নেবে। তাঁরা সেইমতো (নিজের অধীনস্থ অফিসারদের) প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছিলাম।'