ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলিতে অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ দূর করতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে। শুক্রবার সংসদের অধিবেশন চলাকালীন এ নিয়ে সরব হন তিনি।
সাংসদের বক্তব্য হল, বেসরকারি অফিসগুলিতে কর্মীরা যাতে সুস্থ কাজের পরিবেশ পান, তা কেন্দ্রীয় সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে নয়া আইন আনতে হবে এবং সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করতে হবে।
এই ইস্যুতে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উদাহরণ টানেন সাকেত। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি শুধুমাত্র অফিসের কাজের চাপ সামলাতে না পেরে অনেক অল্পবয়সী বেসরকারি কর্মী অকালে মারা যাচ্ছেন! যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
এই ইস্যুতে অ্যানা সেবাস্টিয়ানের মৃত্যুর ঘটনাও উল্লেখ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। তিনি মনে করিয়ে দেন, কীভাবে কাজের চাপ সামলাতে না পারার জন্য মাত্র ২৬ বছর বয়সেই অ্যানাকে হারান তাঁর প্রিয়জনেরা।
সাকেত গোখলে আরও উল্লেখ করেন, ইদানীং বেসরকারি সংস্থাগুলিতে কাজের পরিবেশ যে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে, তা সোশাল মিডিয়ায় কিছুক্ষণ নজর রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
বহু যুবক-যুবতী তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতা সোশাল মিডিয়ায় সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন। ইদানীং এই ধরনের ঘটনা ক্রমশ বাড়ায়, তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের এই রাজ্যসভার সাংসদ।
তিনি বলেন, বেসরকারি কাজগুলির মধ্য়ে যেসমস্ত ক্ষেত্রে সরাসরি ক্লায়েন্টের উপর নির্ভর করে ব্যবসা চালানো হয়, সেখানকার পরিস্থিতি সবথেকে শোচনীয়। ওইসব অফিসে ৮ ঘণ্টার বদলে কর্মীদের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
সবথেকে বড় কথা হল, অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করার জন্য ওই কর্মীদের অতিরিক্ত অর্থও দেওয়া হয় না! যা বিশ্বের বহু দেশেই করা যায় না।
সাকেত আরও বলেন, এই ধরনের সংস্থায় কর্মীদের কার্যত ক্লায়েন্টের কথা মতো সর্বক্ষণ চলতে হয়। তাঁদের নিজেদের ব্যক্তিগত সময় বলে কিছু থাকে না। যেমন - ক্লায়েন্টের মনে হলে তিনি ছুটির দিনেও কর্মীদের ডেকে পাঠান। প্রত্যেক মুহূর্তে এই কর্মীরা এক ভয়ঙ্কর মানসিক চাপের মধ্যে থেকে কাজ করতে বাধ্য হন।
এই প্রেক্ষিতে সাংসদ বলেন, এই সমস্যা মেটাতে অবিলম্বে শ্রম আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা দরকার। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ভারতে চুক্তির অধীনে কর্মরত কর্মীদের ক্ষেত্রে এমন কোনও আইনি সুরক্ষাকবচ নেই, যার মাধ্যমে তাঁদের জন্য অতিরিক্ত কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত ও ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা যায়।
সাকেতের মতে, যথাযথ আইনি সুরক্ষা না থাকাতেই বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিতে কর্মীদের প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু, বদলে তাঁদের খুব সামান্য অর্থই বেতন হিসাবে দেওয়া হয়।