ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের প্রধানের পদে পুনর্বহাল হওয়ার একদিন পরেই বৃহস্পতিবার স্যাম পিত্রোদা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের 'বিরোধিতা' করলেন। পিত্রোদাকে পদে ফেরানো নিয়ে কংগ্রেসের তরফ থেকে জয়রাম রমেশ সাফাই দিয়েছিলেন, স্যাম নাকি কংগ্রেস নেতৃত্বকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি আরও কোনও বিতর্কে জড়াবেন না। রমেশের এহেন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দিয়ে গিয়ে এবার পিত্রোদা বললেন, 'জয়রাম রমেশ যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। দলের মতামত নয়। ভুল করার অধিকার আমার আছে।' এনডিটিভিকে পিত্রোদা বলেন, 'জয়রাম যেটা বলেছেন, সেটা আমি সম্মান করি। তবে আমাকে যা করার তা করতে হবে।' (আরও পড়ুন: দুর্নীতির সব অভিযোগ থেকে মুক্ত বাইজুস? জল্পনার মাঝেই বড় দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের)
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টির জেরে বিপর্যয় দিল্লি বিমানবন্দরে, ছাদ ভেঙে চাপা পড়ল গাড়ি, আহত ৬
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আবহে উত্তরাধিকার কর বসানোর দাবি তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন পিত্রোদা। পাশাপাশি ভারতের বৈচিত্র্য বোঝাতে গিয়ে পূর্ব ভারতীয়দের 'চিনাদের মতো দেখতে' এবং দক্ষিণ ভারতীয়দের 'আফ্রিকানদের মতো দেখতে' বলে মন্তব্য করে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। এহেন স্যাম পিত্রোদা লোকসভা ভোটের আবহে বারংবার বিতর্ক তৈরি করে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে ভোট মিটতেই ফের একবার সেই পদে ফিরেছেন স্যাম পিত্রোদা। এই আবহে স্যামকে পদে ফেরানো নিয়ে সাফাই দিয়ে হাত শিবিরের তরফ থেকে জয়রাম রমেশ বলেছিলেন, 'সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের সময় স্যাম পিত্রোদা এমন কিছু বিবৃতি এবং মন্তব্য করেছিলেন যা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কাছে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য ছিল। এই আবহে পারস্পরিক সম্মতিতে তিনি ওভারসিজ ইন্ডিয়ান কংগ্রেসের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে কোন প্রেক্ষাপটে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং মোদীর প্রচারে কীভাবে সেগুলিকে বিকৃত করা হয়েছিল। আর সম্প্রতি তিনি কংগ্রেস সভাপতিকে এই আশ্বাস দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনও বিতর্ক সৃষ্টি হতে দেবেন না।' তবে জয়রাম রমেশের বক্তব্যকে কার্যত খারিজ করে দিয়ে স্বমহিমায় স্যাম পিত্রোদা।
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুদের ওপর হিংসা নিয়ে উদ্বেগ, 'ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা' নিয়ে বিস্ফোরক USA
উল্লেখ্য, ভোটের আবহে দ্য স্টেটম্যানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যাম পিত্রোদা বলেছিলেন, 'রাম মন্দির, ঈশ্বর, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভগবান, হনুমান, বজরং দল এবং সমস্ত ধরণের বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি দৃষ্টিভঙ্গি ... আরেকটি গোষ্ঠী আছে যারা বলে যে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা পিতা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, কোনও হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য নয়, একটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতির জন্য... আমরা বিশ্বে গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ। বিভিন্ন চেহারার মানুষ ভারতে মিলেমিশে বসবাস করে। আমরা ৭০-৭৫ বছর ধরে দেশে আছি। খুব আনন্দময় পরিবেশে এখানে বসবাস করি আমরা। কয়েকটি লড়াই বাদ দিয়ে লোকেরা একসাথে থাকতে পারে। আমরা দেশকে একত্রে ধরে রাখতে পেরেছি। ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশ - যেখানে পূর্বাঞ্চলের লোকেরা চিনাদের মতো, পশ্চিমের লোকেরা আরবিদের মতো, উত্তরের লোকেরা শ্বেতাঙ্গদের মতো এবং দক্ষিণের লোকেরা আফ্রিকানদের মতো দেখতে। এটা কোনও ব্যাপার নয়। আমরা সবাই ভাই-বোন।'
আরও পড়ুন: পান্নুনকাণ্ডে ভারতের জবাবদিহি চাই, 'নরমে গরমে' দিল্লিকে বার্তা ওয়াশিংটনের
এদিকে ভোটের আবহে পিত্রোদা মার্কিন উত্তরাধিকার আইনের উদাহরণ টেনে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ভারতেও এমন কোনও এক আইন আনা উচিত। তাতে করে একজন মারা গেলে, তাঁর সম্পত্তির প্রায় আর্ধেক চলে আসবে সরকারের হাতে, আর বাকি আর্ধেকই তাঁর সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে পাবে। কংগ্রেসের ইস্তেহারে প্রস্তাবিত সম্পদ পুনর্বণ্টনের সমর্থনে বলতে গিয়েই স্যাম পিত্রোদা এহেন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটা নিয়েও জোর বিতর্ক হয়েছিল সেই সময়।