বাংলাদেশের মাগুরায় ধর্ষিতা ৮ বছরের বালিকার মৃত্যুর পর তাকে কবরস্থ করার অনুষ্ঠানে যোগদান করতে গিয়ে প্রবল বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর অন্যতম মুখ তথা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে। যে বিতর্কের জবাব দিতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিরাট পোস্ট করতে হল তাঁকে!
এই গোটা ঘটনার জন্য সারজিসকে যেমন সমাজমাধ্যমে ট্রোল করা হয়েছে, তেমনই নিজের পোস্টে পালটা সমালোচকদের তুলোধনা করেছেন সারজিস। নানা উদাহরণ টেনে এনে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আদতে তিনি কতটা কাজের মানুষ। এবং সেইসব কাজের কথা তিনি মোটেও সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করেন না!
শুধু তাই নয়। তাঁর একটিমাত্র বিশেষ ছবি ছাপার জন্য বাংলাদেশের একটি বিশেষ সংবাদমাধ্যমকেও নিশানা করতে ছাড়েননি সারজিস। তাদের 'অপেশাদার' বলে তোপ দেগেছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ মার্চের একটি পোস্ট ঘিরে। যে পোস্ট করেছিলেন সারজিস নিজেই। উল্লেখ্য, ওই দিনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মাগুরা ধর্ষণ কাণ্ডের শিকার ৮ বছরের বালিকার মৃত্যু হয়। এবং ওই দিনই তার দেহ হেলিকপ্টারে করে তার গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় ও তা কবরস্থ করা হয়। ঠিক ছিল, স্থানীয় সময় ৭টা নাগাদ বালিকাকে কবর দেওয়া হবে।
তার প্রায় ঘণ্টা তিনেক আগে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টটি করে সারজিস জানান, তাঁরাও মাগুরা যাচ্ছেন এবং তিনি বার্তা দেন, বালিকার দেহ কবরস্থ করা-সহ অন্যান্য রীতি পালনের সময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
পরবর্তীতে সামনে আসে, পুলিশের (মতান্তরে সেনার) যে হেলিকপ্টারে বালিকার দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই হেলিকপ্টারেই মাগুরা যান সারজিস এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ-সহ কয়েকজন নেতা।
এছাড়াও, একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে সারজিসের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যায়, বালিকার জানাজায় অংশ নিতে যাওয়া সারজিস মন দিয়ে নিজের ফোন ঘাঁটছেন!
এই ঘটনাক্রম আমজনতাকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। কারণ, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই মাগুরা ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের উপর বিরক্ত। তার উপর সেই সরকারের পক্ষে থাকা, সদ্য রাজনীতিতে পা দেওয়া তরুণ নেতাদের এই ধরনের আচরণে মানুষ আরও তেতে ওঠে। শুরু হয়ে ট্রোলিং, ব্যঙ্গ, সমালোচনা।
যার জবাব শনিবার (১৫ মার্চ, ২০২৫) আরও একটি ফেসবুক পোস্টে দেন সারজিস। তিনি জানান, ওই দিন সংশ্লিষ্ট হেলকপ্টারে 'জায়গা খালি' ছিল বলেই তিনি ও তাঁর দলীয় সহকর্মীরা তাতে উঠেছিলেন! কিন্তু প্রশ্ন হল, এটা কি কোনও এলিট ও আপতকালীন সরকারি যানে সওয়ার হওয়ার যুৎসই যুক্তি হতে পারে? এর ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট পোস্টে নেই।
এছাড়াও, সারজিস জানান, তাঁরা দেহ কবর দেওয়ার রীতি শুরু হওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। সেই দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করার মাঝেই তিনি তাঁর ফোনে কিছু নোটিফিকেশন চেক করছিলেন বলে জানান সারজিস।
তাঁর প্রশ্ন, কেন সংশ্লিষ্ট মিডিয়া হাউস তাঁর সেই সময়কারই ছবি তুলল? এবং সেই ছবি প্রকাশ করল? তারা তো তাঁর অন্য কোনও ছবিও ব্যবহার করতে পারত! কেন সেটা করা হল না? সারজিসের বার্তা, বেশি প্রচার পেতেই নাকি এই 'অপেশাদার' কাজটি করেছে ওই সংবাদমাধ্যম।
এর পাশাপাশি সারজিস জানিয়েছেন, মাগুরার ঘটনায় আক্রান্ত বালিকা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বারবার বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বালিকার মৃত্যুর পর পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার কাছে নিজের দাবিও জানিয়েছেন। যদিও তিনি দাবি জানিয়েছেন বলেই যে দ্রুত সব কাজ হয়েছে, এমনটা নয় বলেও স্বীকার করেছেন সারজিস।